অন্তহীন বিতর্ক ছেড়ে একটু রাস্তায় নামলে কি ভাল হয় না!
বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের দেড় মাস পরে সিপিএমের কাছে এমন প্রস্তাব নিয়েই বসতে চাইছেন বাম শরিক নেতৃত্ব। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল না জোট, সেই সিদ্ধান্ত ঠিক হয়েছিল না ভুল— এই লাগাতার বিতর্কে রাশ এনে প্রতিবাদ-আন্দোলনের পথে বামফ্রন্টকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন তাঁরা। এমনিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল সাফল্যের বাজারে বামফ্রন্ট এখন হীনবল। এর পরে শুধু জোটের কূটকচালিতে কালক্ষেপ করতে থাকলে রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী পরিসরও তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে বাম নেতাদের আশঙ্কা!
এমন নয় যে, ভোটে বিপর্যয়ের পরে কাটাছেঁড়ার বাতাবরণ থেকে বাম শরিকেরা বেরিয়ে এসেছে। তাঁদের মতামত অগ্রাহ্য করে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সিপিএমকেই দুষছেন শরিক নেতারা। ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস যেমন এই বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা চেয়ে সীতারাম ইয়েচুরিকে চিঠি দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ঘরের ভিতরে আলোচনার জন্য বাইরের কর্মসূচি থামিয়ে রাখলে সামনে আরও বড় বিপদ! ঘটনা এবং বিষয়ের কোনও বিরাম নেই। সে সব নিয়ে রাস্তায় থেকে জনমানসে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করাই
এখন প্রধান লক্ষ্য না হলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়তে হবে বলে তাঁদের যুক্তি। এক দিকে শাসক তৃণমূল এবং অন্য দিকে বিরোধী কংগ্রেসের আড়ালে তখন বামেরা আরও চাপা পড়ে যাবে! উপরি বলতে বিজেপি-র বিপদ তো আছেই!
সদ্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসন সমঝোতার প্রশ্নে সিপিএমকে তুলোধোনা করে এলেও ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘জেলায় জেলায় গ্রামে-গঞ্জে সংগঠনের সেই জোর এখন আমাদের নেই। তাই নানা ঘটনা বেছে নিয়ে কলকাতা শহরেই আমরা জোরালো ভাবে পথে নামি না কেন? তা হলেও মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে।’’ দলের অন্দরে ফব-র প্রস্তাব, বিভিন্ন বাম দল মিলিয়ে কয়েকশো কর্মী বাছাই করে এক ধরনের ঝটিকা বাহিনী তৈরি করে রাখা হোক। যে কোনও ঘটনায় কম সময়ে যারা সক্রিয় হয়ে কয়েক হাজার মানুষকে রাজধানীর রাস্তায় জড়ো করতে পারবে। আপাতত এই পথেই লড়াই শুরু হোক। বামফ্রন্টের বৈঠকে এই প্রস্তাব পেশ করতে চান ফব নেতৃত্ব।
একই সুরে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি যা হয়েছে, সেটা বামপন্থীদের জন্য খুব সুখকর নয়। এই অবস্থা থেকে বেরোতে গেলে বামেদের রাস্তায় নেমেই লড়তে হবে।’’ বামফ্রন্টের শরিক এবং বাইরের বাম দলগুলিকে নিয়ে ১১ জুলাই কলকাতায় একটা মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে এফডিআই নীতির প্রতিবাদ, নানা বিষয়ই ওই মিছিলের প্রতিপাদ্য। আরএসপি নেতাদের বক্তব্য, মাঝেমধ্যে একটা-আধটা মিছিলে না থেমে ধারাবাহিক ভাবেই রাস্তায় থাকা উচিত বামেদের। মমতা জমানার প্রথম পাঁচ বছরে বিরোধী হিসাবে করা ভুলের আর পুনরাবৃত্তি চলবে না। আরএসপি-র যুব সংগঠন আরওয়াইএফ ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগের প্রশ্নে পথে নেমেছে।
এই পথে সিপিএম নেতৃত্বেরও আপত্তি নেই। তবে সিপিএমের অন্দর মহলে আপাতত বিভ্রান্তি অব্যাহত কংগ্রেস-প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থানের জন্য! পলিটব্যুরোর সদস্যদের সঙ্গে ১০ জুলাই রাজ্য কমিটির বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে আছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। তবে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কোন আন্দোলনে কাকে সঙ্গে নেওয়া যাবে, সেটা হয়তো তর্কসাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু পথে নামা ছাড়া যে পথ নেই, সেটা অবশ্যই ঠিক কথা।’’