এনআরসি-বিরোধী সভায় কানহাইয়া কুমার। সোমবার শহরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শুধু প্রতিবাদে রাস্তায় নামাই যথেষ্ট নয়। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) রুখতে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দিলেন কানহাইয়া কুমার, কবিতা কৃষ্ণন, কান্নন গোপীনাথন-সহ বাম নেতা ও প্রাক্তন আমলারা। তাঁদের যুক্তি, সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া সরকার যদি সংবিধানকে না মানে, তা হলে জনতারও কোনও দায় নেই সরকারকে মানার।
এনআরসি, এনপিআর এবং সিএবি-র বিরোধিতায় ‘পাহাড় থেকে সাগর যাত্রা’র পরে সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছিল এনআরসি-বিরোধী যুক্ত মঞ্চ। লোকসভায় যখন সিএবি পেশ করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিরোধীরা পাল্টা সওয়াল করছেন, কলকাতার রাস্তায় একই ভাবে বিলের ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কানহাইয়ারা। কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ না হলেও সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ভালই। তার আগে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিলও হয়েছে।
কানহাইয়া এ দিন বলেন, ‘‘সরকারের যদি সন্দেহ হয় আমরা অনেকেই এ দেশের নাগকির নই, আমরা অনুপ্রবেশকারী, তা হলে নাগরিক কি না, তা প্রমাণ করার ভার সরকারই নিক। আমরা কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে যাব?’’ এনআরসি-র প্রথম ধাপ হিসেবে এনপিআর-এর জন্য সমীক্ষার কাজে সরকারি আধিকারিকেরা এলে জল খাইয়ে তাঁদের বিদায় দেওয়ার পরামর্শ দেন সিপিআইয়ের তরুণ নেতা। কানহাইয়ার কথায়, ‘‘দরজায় লিখে রাখবেন, পরের বার ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে! ওই টাকা অ্যাকাউন্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন।’’
সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কবিতার বক্তব্য, পেঁয়াজ-সহ আনাজের চড়া দাম, অর্থনীতির বেহাল দশা, কর্মসংস্থানের সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ধর্ম, জাতি, ভাষার নামে বিভাজন করতে চাইছে। তাঁর আহ্বান, ‘‘এনআরসি বা এনপিআরের কাজ করতে এলে মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ চাই। এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই।’’ পদত্যাগী আইএএস গোপীনাথনের অভিযোগ, হিন্দুদের প্রথমে শরণার্থী করে পরে নাগরিকত্ব দিয়ে তাঁদের সঙ্গেও ‘বদান্যতা’র মোড়কে প্রতারণা করছে মোদী সরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামী রামপ্রসাদ বিসমিল ও আসফাকের ‘আত্মবলিদানে’র দিন ১৯ ডিসেম্বর তাঁদের বন্ধুত্বকে মনে রেখে দেশ জুড়ে এনআরসি-প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন কানহাইয়ারা। যুক্ত মঞ্চের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ বসু জানিয়েছেন, ওই দিন কলকাতায় তাঁরা কর্মসূচি নেবেন।
কানহাইয়াদের সুরেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেছেন, ইজরায়েলের কায়দায় জাতিবৈষম্যবাদী গণতন্ত্র হতে চলেছে ভারত। তিনি জানান, চলতি ‘লং মার্চ’-এ পদযাত্রীরা সিএবি-র প্রতিলিপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ করবেন। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধি আব্দুর রফিক, আব্দুল আজিজ, আবু তালিব রহমানি প্রমুখ বলেছেন, সিএবি-র সরাসরি বিরোধিতা না করে যে সব দল সংসদে কক্ষত্যাগ বা ভোটদানে বিরত থাকবে, তাদেরও বিজেপির ‘ভয়ঙ্কর নীতি’র সমর্থক বলেই ধরতে হবে।