প্রতীকী চিত্র।
কলকাতা ও হাওড়ার পুরভোটে এ বার আনুষ্ঠানিক জোটের পথে যেতে চাইছে না বামফ্রন্ট। তবে সব আসনে বামেরা প্রার্থী দেবে না। যে আসনগুলিতে বামেদের প্রার্থী থাকবে না, সেখানে কংগ্রেস বা অন্য কাউকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে পরিস্থিতি বুঝে।
বিধানসভা ভোট এবং উপনির্বাচনের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার নিরিখে পুরভোটে ‘একা চলা’র পরীক্ষা করা যায় কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল সিপিএমের অন্দরে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সোমবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে কলকাতা ও হাওড়ার পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা ছিল। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু সেখানে জানান, ফ্রন্টগত ভাবে লড়াই করাই তাঁদের প্রথম লক্ষ্য। কিন্তু সব আসনে বামেদের প্রার্থী দেওয়ার পরিস্থিতি থাকবে না। সেই সব ওয়ার্ডে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরোধিতায় কংগ্রেস বা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। বাকি শরিকেরা মেনে নিলেও এই ভাবনায় প্রবল আপত্তি তোলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও সমঝোতাই চলবে না। প্রয়োজনে কংগ্রেসের আসনে তাঁরা প্রার্থী দিয়ে দেবেন!
রাজ্য বামফ্রন্টের এই আলোচনার দিনেই কলকাতা জেলা বামফ্রন্টে ঠিক হয়েছে, কলকাতা পুরসভায় প্রায় ১২৭টি ওয়ার্ডে বামেরা প্রার্থী দেবে। বাকি ১৭টি ওয়ার্ডে বামেদের তরফে প্রার্থী দেওয়ার মতো দাবিদার নেই। ওই সব আসনে কংগ্রেস বা নির্দল হিসেবে কোনও পরিচিত মুখকে কৌশলগত ভাবে সমর্থন দেওয়া হবে কি না, তা পরে ঠিক হবে। একই কৌশল নিতে চায় হাওড়া জেলা বামফ্রন্টও। কলকাতায় পুরভোট হতে পারে ধরে নিয়ে গত বছর ওয়ার্ড ভাগাভাগির আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে রেখেছি বামফ্রন্ট। তখন জোট-সঙ্গী হিসেবে কংগ্রেসের জন্য কিছু আসন ছেড়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন কৌশল বদলে আগে নিজেদের লড়াইয়ের আসন চিহ্নিত করছে বামেরা। এবং ফ ব-ও গত বছর কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা তাদের ভাগের আসন ফের নিজেদের জন্যই দাবি করছে। অন্য দিকে, আইএসএফ-ও ঠিক করেছে, কলকাতা ও হাওড়ায় বামেদের সঙ্গে জোট ছাড়াই তারা নিজেদের মতো করে প্রায় ২৫টা আসনে প্রার্থী দিতে চায়।
নরেনবাবু এ দিন রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে বলেছেন, ‘‘সব আসন নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম জোটে আমরা নেই।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘নরেনবাবু যদি বলে থাকেন এটা হলে ওটা হবে না, সেটা ওঁদের মত। যে কোনও রাজনৈতিক দলের স্বাধীন মত দেওয়ার অধিকার আছে। শুধু এটুকুই বলব, বামফ্রন্ট একটা ধারাবাহিক লড়াই, দীর্ঘ ঐতিহ্য। সেই শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে চলাই সমীচীন।’’ বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় বাম-সহ ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে কী ভাবে চলা যায়, তা নিয়ে জেলায় জেলায় আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজন হলে রাজ্য স্তরে এই নিয়ে কথা বলা হবে বলে সুজনবাবু জানান।