বৈঠকে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা।
উপলক্ষ তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। তাকে সামনে রেখেই বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় রাজ্যে একসঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। মুখোমুখি আলোচনায় বসে বুধবার বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সোমেন মিত্রেরা ঠিক করলেন, দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি এ বার থেকে যৌথ সভা, মিছিলও দেখা যাবে।
কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদর আসন কংগ্রেস লড়বে এবং করিমপুরে তারা সমর্থন করবে বাম প্রার্থীকে, এই সমঝোতা সূত্র তৈরিই ছিল। মধ্য কলকাতায় আরএসপি-র ক্রান্তি প্রেসে এ দিন সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে প্রদেশ কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্ব সেই ২:১ সূত্রেই আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিয়েছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিনই প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডাকা আছে আজ, বৃহস্পতিবার। সেখানে কংগ্রেসের দুই কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম ঠিক হবে। তাই সোমেনবাবুদের অনুরোধ মেনে বিমানবাবুরাও এক দিন অপেক্ষা করছেন। তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে দু’পক্ষের আসন সমঝোতা হলেও একসঙ্গে প্রচারে যাওয়া নিয়ে লুকোচুরি ছিল। এ বার ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রভিত্তিক সমন্বয় করে বাম ও কংগ্রেস নেতারা একে অপরের প্রার্থীর জন্য প্রচারে যাবেন।
উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া মিটে যাবে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এই বোঝাপড়াকে বাম ও কংগ্রেস নেতারা যে উপনির্বাচনের বাইরেও রাস্তায় নিয়ে যেতে চান, তার ইঙ্গিত দিয়ে প্রাথমিক কিছু পরিকল্পনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাঁচানো-সহ একগুচ্ছ দাবিতে আগামী ৩০ নভেম্বর চিত্তরঞ্জন থেকে ‘লং মার্চ’ শুরু করবে সিটু। ওই পদযাত্রা কলকাতায় পৌঁছবে ১১ ডিসেম্বর। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার থেকেও একটি পদযাত্রা শিলিগুড়ি ঢুকবে ১০ ডিসেম্বর। শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি ছাড়াও কংগ্রেস দল এবং তাদের সব সংগঠন যাতে সক্রিয় ভাবে ওই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে, সেই অনুরোধ জানিয়েছেন বিমানবাবু। একই সঙ্গে ঠিক হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার রায় বেরোলে পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত কলকাতা ও রাজ্যের অন্যত্র একসঙ্গে পতাকা নিয়েই পথে নামবে বাম ও কংগ্রেস।
বিমানবাবু, সূর্যবাবু ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন সিপিএমের রবীন দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায় ও হাফিজ আলম সৈরানি, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী ও মনোজ ভট্টাচার্য এবং অন্য শরিক দলের নেতারাও। কংগ্রেসের তরফে সোমেনবাবুর সঙ্গে ছিলেন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। বৈঠকে বাম নেতাদের একাংশ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সাম্প্রতিক চিঠির (খড়গপুরে তৃণমূলকে সমর্থনের কথা যেখানে ছিল) প্রসঙ্গ তুলে জানতে চান, জোট বা সমঝোতার প্রশ্নে কংগ্রেসের মধ্যে কি সংশয় আছে? সোমেনবাবু জবাবে বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে কে কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না। দলের হাইকম্যান্ডের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই তাঁরা বামেদের সঙ্গে কথা বলছেন।
বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, ‘‘গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা ও সংবিধান রক্ষা বা এনআরসি-র বিরোধিতার প্রশ্নে, মানুষের জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে একসঙ্গেই লড়াই হবে। আর নির্বাচনে লক্ষ্য হবে, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ভোট এক জায়গায় আনা।’’ আর সোমেনবাবুর মন্তব্য, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে মাঝে মাঝে ছন্দপতন হচ্ছিল। সেই পর্ব শেষ হয়ে এ বার একসঙ্গে পথ চলা শুরু হল। গন্তব্যে পৌঁছনো পর্যন্ত একসঙ্গেই চলব।’’