বামফ্রন্ট আর মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী! আপাত অভাবনীয় এই সমীকরণই বাস্তবায়িত হল এ বার। নানা মহলে বিস্ময়ের মুখে বাম নেতারাও জানিয়ে দিলেন, তাঁরা গাঁধীবাদী নন! কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংহতির আদর্শ রক্ষায় গাঁধীজিকে স্মরণ করতে তাঁদের অসুবিধা নেই।
গাঁধীর হত্যাদিবস উপলক্ষে সোমবার এন্টালি মার্কেট থেকে বেলেঘাটার গাঁধী ভবন পর্যন্ত মিছিল ছিল বামফ্রন্টের শরিক ও বাইরের মিলে ১৭টি দলের। যার জেরে শিয়ালদহ থেকে বেলেঘাটা রোড সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে স্তব্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু ক্ষণ। মিছিলে যোগ দিয়েই বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেন, দেশ ও রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতির চাপেই তাঁরা এত বছর পরে গাঁধী-স্মরণে পথে নেমেছেন।
বস্তুত, শুধু কলকাতায় মিছিলই নয়। গোটা রাজ্যেই এ বার কয়েক দিন ধরে নানা কর্মসূচির মধ্যে গাঁধীজির হত্যার বার্ষিকী পালন করছে বামপন্থী নানা সংগঠন। জেলায় জেলায় নানা ধরনের কনভেনশনও হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে জড়িত না হয়েও সামাজিক উৎসবে সামিল হওয়ার খোলা হাওয়া এখন ঢুকেছে সিপিএমে। সেই পথ ধরেই এমন এমন ব্যক্তিত্ব বা চরিত্রের শরণ নিতে বামেদের দেখা যাচ্ছে, যাঁরা আগে বাম রাজনীতিতে চর্চিত ছিলেন না! বিবেকানন্দের পরে এ বার সেই তালিকায় ঢুকলেন গাঁধীজিও!
বেলেঘাটায় মিছিল শেষে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, কেন গাঁধীজির হত্যাদিবস পালন? পরিষ্কার বলছি, আমরা গাঁধীবাদী নই। মতপার্থক্য আছে, থাকবে। তা-ও এখানে এসেছি। কারণ তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।’’ সূর্যবাবুর যুক্তি, গাঁধীর হত্যাকারীর নামে মন্দির বানানোর চেষ্টা করছে আরএসএস। সঙ্ঘের অন্যতম প্রচারক দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে খাদির ক্যালেন্ডার থেকে গাঁধীকে সরিয়ে নিজের ছবি বসাচ্ছেন! যিনি নিজেই গুজরাতে গণহত্যার অন্যতম নায়ক! এই পরিস্থিতি আগে আসেনি বলেই বাম নেতৃত্বের বক্তব্য।
তৃণমূলও যে বিপজ্জনক, সেই অভিযোগ করে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, রাজ্যের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মাথা চাড়া দিচ্ছে। শাসক দল তাতে ইন্ধন দিচ্ছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে মেরুকরণের চেষ্টা জারি আছে বলে তাঁর অভিযোগ।