দলত্যাগ করলে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে নতুন করে জনাদেশ নিয়ে আসা উচিত। পশ্চিমবঙ্গে দল ভাঙানোর হিড়িকের মুখে এই দাবি লাগাতার তুলে চলেছে বিরোধীরা। মানছে না শাসক দল। ত্রিপুরায় আবার শাসক দলই ইস্তফার নজির রাখল! বিরোধীরা বরং সেখানে সেই পথে হাঁটতে নারাজ!
এক যাত্রায় পৃথক ফল বলতে কী বোঝাতে পারে, তার হাতে গরম উদাহরণ হতে পারে ত্রিপুরায় আসন্ন উপনির্বাচন। উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যে দুই বিধানসভা কেন্দ্র খোয়াই ও বড়জলায় উপনির্বাচন বাংলার সঙ্গেই আগামী ১৯ নভেম্বর। তার মধ্যে খোয়াইয়ে উপনির্বাচন হচ্ছে সরকারি মুখ্য সচেতক তথা সিপিএম বিধায়ক সমীর দেব সরকারের মৃত্যুতে। আর বড়জলায় উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে বিধায়ক দল বদল করে পদ ছেড়ে দেওয়ায়। কংগ্রেস থেকে সম্প্রতি এক ঝাঁক বিধায়ক বেরিয়ে এসেছিলেন। তার মধ্যে জিতেন সরকার ফিরে এসেছেন তাঁর পুরনো দল সিপিএমে। দল তাঁকে বিধায়ক-পদ ছেড়ে দিতে বলায় তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলে যাওয়া চার বিধায়ককে তাঁদের নতুন দল পদত্যাগের নির্দেশ দেয়নি। ফলে, এ রাজ্যের মতোই ত্রিপুরাতেও দলত্যাগীরা আপাতত নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছেন না।
বঙ্গের সিপিএম নেতারা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে তৃণমূলকে বিঁধছেন। কিন্তু এখানে সেই আক্রমণ কেবলই মৌখিক। ত্রিপুরায় মানিক সরকারের দল কিন্তু নিজেরা দৃষ্টান্ত রেখে তৃণমূলের সমালোচনার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দাশের কথায়, ‘‘আমরা মনে করি, দলত্যাগ করলে ইস্তফা দিয়ে নতুন করে মানুষের রায় নেওয়া উচিত। জিতেনবাবুর ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করেছি। কিন্তু তৃণমূল সেই পথে যেতে চায়নি।’’ নৈতিকতার এই প্রশ্ন উপনির্বাচনের প্রচারেও ব্যবহার করতে চায় সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গেও যে তৃণমূল একই কাজ করছে, সে কথাও বলছেন গৌতমবাবুরা।
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা অধুনা তৃণমূল নেতা সুদীপ রায় বর্মণ অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, তাঁদের পদত্যাগের প্রশ্ন নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলে আসা বিধায়কদের পদ খারিজের জন্য কংগ্রেসের আবেদন বিধানসভার স্পিকার খারিজ করে দিয়েছেন। তাই আমাদের দলে ইস্তফার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।’’ যার প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতৃত্ব আবার পাল্টা বলছেন, প্রশ্নটা আইনের নয়। প্রশ্ন নৈতিকতার। প্রসঙ্গত, বাংলায় দল বদল করে তৃণমূলে আসা এক বর্ষীয়ান বিধায়কও জানাচ্ছেন, তাঁদের ইস্তফা দেওয়ার জন্য দলের তরফে কোনও কথাই বলা হয়নি। বিধানসভার স্পিকারও এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।
জিতেনবাবুর কেন্দ্রে ত্রিপুরা সিপিএম নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত, তরুণ মুখ তুলে এনে হারা আসন পুনরুদ্ধার করতে চাইছে। বড়জলা (সংরক্ষিত) আসনের প্রার্থী ঝুমু সরকার উচ্চ শিক্ষিত, যুব আন্দোলনের কর্মী, তাঁর বাবা পেশায় চা-বিক্রেতা। দলের এমন যুব মুখকে এখন নির্বাচনে ব্যবহার করছে সিপিএম। খোয়াইয়ে প্রার্থী হয়েছেন জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত। জোড়া উপনির্বাচনে জিতে তৃণমূলের উত্থান রোখাই বামেদের সামনে চ্যালেঞ্জ।