এক কালে ছিল শক্ত ঘাঁটি। এখন সে সব ধূসর অতীত! দুর্গ ধরে রাখার কাণ্ডারী উদয়ন গুহও বামের মোহ কাটিয়ে এখন জোড়া ফুলে। এই পরিস্থিতিতে এ বার কোচবিহারে লোকসভা উপনির্বাচনকে ঘিরে বেকায়দায় পড়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক তথা বামফ্রন্ট।
তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহের মৃত্যুর জেরে কোচবিহার (সংরক্ষিত) লোকসভা আসনে উপনির্বাচন আসন্ন। বামফ্রন্টের শরিক ফ ব ওই আসনে লড়ে। কিন্তু এ বার উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তারা পড়েছে সমস্যায়। একে তো সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন মেনে এবং রাজ্য প্লেনামে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হবে না। কোচবিহার ও তমলুক বামেদের লড়তে হবে নিজেদের শক্তিতেই। সেই কাজ করতে গিয়ে ফ ব নেতৃত্ব দেখছেন, এক দিকে সংগঠনের বেহাল
দশা। তার উপরে প্রার্থী বাছাইও হয়ে উঠেছে মাথাব্যথা!
কয়েক মাস আগে বিধানসভা ভোটে কোচবিহার জেলায় একটি মাত্র আসনে জিততে পেরেছিল ফ ব। তার পরে সংগঠনের কাজকর্ম আরও গুটিয়ে গিয়েছে। লোকসভা উপনির্বাচনে দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের পছন্দের প্রার্থী জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আবার প্রার্থী হতে বিশেষ ইচ্ছুক নন বলে দলের অন্দরে ইঙ্গিত দিয়েছেন। কয়েক মাস আগেই মেখলিগঞ্জ বিধানসভা আসনে হেরে এখনই লোকসভায় দাঁড়াতে তিনি উৎসাহ পাচ্ছেন না। তা ছাড়া, তাঁর মেখলিগঞ্জ বিধানসভা এলাকা কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়েও না। বিকল্প হিসাবে গত বার লোকসভা ভোটে কোচবিহারের বাম প্রার্থী দীপক রায়ের নাম ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ফ ব সূত্রের খবর, পরিস্থিতির নিরিখে তিনিও দলের অন্দরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রার্থী করা হলে যাবতীয় দায়িত্ব দলকেই নিতে হবে। ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে উদ্যোগী হওয়া এখন আর
সম্ভব নয়।
জট কাটাতে কোচবিহার জেলা কমিটি উপনির্বাচন নিয়ে বৈঠক ডেকেছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরাও জেলায় সঙ্কটের উপরে নজর রাখছেন।
বাম নেতাদের একাংশ বলছেন, কামতাপুরী-সহ নানা সংগঠনকে কাছে টেনে সীমান্তবর্তী ওই জেলায় প্রভাব বাড়িয়ে ফেলেছে বিজেপি। এমনিতেই সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় গেরুয়া শিবিরের কিছু বাঁধা ভোট আছে। ছিটমহলের জন্য আন্দোলনকারীদের নেতারাও এখন বিজেপি-র সঙ্গে আছেন। উল্টো দিকে, বাম-কংগ্রেস একজোট হয়ে তৃণমূল বা বিজেপি-র মোকাবিলা করতে পারছে না। তার উপরে ঠিকমতো প্রার্থী না পাওয়া গেলে লড়াই বামেদের পক্ষে আরও কঠিন। বরং বিজেপি-র সামনে সুযোগ তাদের প্রভাব আরও গুছিয়ে নেওয়ার। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের আশঙ্কা, ‘‘সংগঠন এবং পরিস্থিতি যে দিকে আছে, উপনির্বাচনে লড়াইটা তৃণমূল বনাম বিজেপি হয়ে যেতে পারে। আমরা তৃতীয় স্থানে না চলে যাই!’’ আলিমুদ্দিনও পরিস্থিতি জরিপ করে কোচবিহার জেলা নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের ধারণা, কোচবিহারের তুলনায় তমলুক আসনে তাঁদের লড়াই দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।