রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।
ঝুলে থাকা বিল নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের টানাপড়েনে বিরোধী নেতারা কোনও ভূমিকা নিতে চান না। রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে গিয়ে মঙ্গলবার এই কথা জানিয়ে এলেন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের মতে, রাজ্যের মানুষের সমস্যা অনেক। রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের অবিরাম চাপান-উতোরে মানুষের কোনও উপকার হচ্ছে না।
গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশন সংক্রান্ত বিল আটকে রয়েছে রাজভবনে। প্রথমটি বিধানসভায় পাশ করানোর সময়ে শাসক পক্ষ ‘তঞ্চকতা’ করেছে বলে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছিলেন কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ওই বিলে এখনও সম্মতি দেননি। তফসিলি কমিশন বিলটি বিধানসভায় পেশ করার অনুমোদনও দেওয়া হয়নি রাজ্যপালের তরফে। ওই দুই বিল নিয়ে আলোচনার জন্য রাজভবনে সব দলের পরিষদীয় নেতাদের ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। এমন বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাসক তৃণমূল বয়কট করার কথা বলেছিল। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআইয়ের অশোক দিন্দা এ দিন বৈঠকে গিয়েছিলেন। যোগ দেননি বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা।
বিল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। তবে রাজ্যপাল ধনখড়ের বক্তব্য, ‘‘পরিষদীয় নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিল নিয়ে সমস্যার সমাধান অবশ্য এখনও মেলেনি। এই বিষয়ে ২৬ জানুয়ারির পরে আবার আলোচনা হবে।’’ বৈঠকের প্রথম তারিখ ছিল ১৭ জানুয়ারি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজভবনকে জানানো হয়, অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকায় সে দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। বিরোধী নেতারাও সে দিন সময় করতে না পারায় বৈঠক পিছিয়ে এ দিন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী এর পরে গুরুত্ব দিয়ে যাতে এই বৈঠকের কথা ভাবেন, সেই আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যপাল। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় ও তৃণমূলের পরিষদীয় দলের সচিব সমীর চক্রবর্তী এ দিন বিধানসভাতেই ছিলেন। তবে তাঁরা রাজভবন-মুখো হননি। পার্থবাবু বলেন, ‘‘উনি অনেক ফাইল আটকে রেখেছেন। আগে ফাইল ছাড়ুন! তার পরে আলোচনা হবে।’’
মান্নান, সুজনবাবুরা রাজ্যপালকে বলেছেন, তফসিলি কমিশনের বিল বিধানসভায় পেশই হয়নি। যে বিল তাঁরা দেখেনইনি, তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে কী লাভ? গণপ্রহার প্রতিরোধ বিলের ক্ষেত্রে ‘দৃষ্টিভ্রম’ হয়েছিল বলে সরকার রাজভবনকে জানিয়েছে। বিধানসভা থেকে পাঠানো হয়েছে সে দিনের অধিবেশনের কার্যবিবরণীও। তবে ‘দৃষ্টিভ্রম’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিয়ে রাজ্যপাল এবং বিরোধীরা একই রকম অন্ধকারে। সুজনবাবুদের বক্তব্য, একই মেমো নম্বরে দু’রকম বয়ানের বিল ছাপিয়ে একটা পাশ করানো হয়েছিল। এতে আইনি জটিলতা হতে পারে। এই ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যা চান তাঁরা।
বৈঠকের পরে বিরোধী দলনেতা মান্নান বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার সঙ্গে রাজ্যপালের কী কথা হয়েছে, সেটা সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তাঁর কাছে বিরোধীদের যা জানানোর থাকে, আমরা শুধু সেটাই বলতে আসি।’’ সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের দৃষ্টিভঙ্গি হল, রাজ্যপাল পদটারই প্রয়োজন নেই। তবে যতক্ষণ সেই পদ আছে, তাকে মান্য করে চলতে হবে। রাজ্যপালের সামনেই এই দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছি।’’ মান্নান ও সুজনবাবু দু’জনেই বলেন, রাজ্যপাল ও সরকারের অহেতুক বিতর্কে কারও কোনও লাভ হচ্ছে না।