তৃণমূল ‘নীরব’,যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন বাম-কংগ্রেসের

অযোধ্যা মামলার রায় প্রকাশের আগে থেকেই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

বিজেপির প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত। বাম ও কংগ্রেসের মতে, দীর্ঘ দিনের বিবাদের ফয়সালা হলেও ন্যায় ও যুক্তিতে ফাঁক থেকে গেল। শুধু নীরব থাকল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা লিখে বুঝিয়ে দিলেন, অনেক সময়ে কিছু বলার চেয়ে নীরবতাই বেশি শক্তিশালী।

Advertisement

অযোধ্যা মামলার রায় প্রকাশের আগে থেকেই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের বিধায়ক-সাংসদদেরও নিজের নিজের এলাকায় শান্তিরক্ষায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি ছাড়া তৃণমূলের তরফে রায় নিয়ে আর কেউ কোনও মন্তব্য করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তবে শনিবার রায় প্রকাশের পরেও কোনও মন্তব্য করেননি মমতা। দুপুরের পর থেকে ‘বুলবুল’ ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের উপকূলের গতি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছিল। রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকার দিকে বাড়তি সতর্কতামূলক নজর রাখতে বিকেল থেকে নবান্নের কন্ট্রোল রুমেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

তৃণমূলের এই নীরবতা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশ। তাদের মতে, নীরবতার মধ্য দিয়েই তৃণমূল নেত্রী কোনও বার্তা দিতে চাইছেন। যা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এ দিন সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে পেজ-এ মুখ্যমন্ত্রীর কবিতায়। যেখানে মমতা লিখেছেন, ‘অনেক সময় কথা না বলেও / অনেক কথা বলা হয়ে যায়। / কিছু বলার থেকে / না বলাটা / আরও শক্তিশালী বলা’। তার আগে নবান্নে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মুখে বলেছেন, ‘‘নবি দিবস আছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে পালন করুন। শান্তিতে থাকুন, সুস্থ থাকুন।’’

Advertisement

সর্বোচ্চ আদালত বিতর্কিত জমি মন্দিরের জন্য ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়ায় তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে মনে করছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রামমন্দির নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই করছে বিজেপি। মোদী-শাহের সরকার তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন করেছে, ৩৭০ রদ করেছে, এ বার রামমন্দির করল।’’ কিন্তু অযোধ্যা রায় তো সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে। এর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক কী? দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘মোদী-শাহের মতো শক্ত সরকার আছে বলেই এমন রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত সরকারের আমলে এমন রায় দেওয়া কঠিন ছিল। তখন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখতে পারেনি।’’ এই রায়ের পরে কাশী, মথুরা নিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে দিলীপবাবুর আশা।

আদালতের রায়ের পরে মন্দির নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক, এই দাবি করেছে বামেরা। তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট পক্ষ যখন আপসে মীমাংসার পথে যেতে পারেনি, সে ক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপেই ফয়সালা দরকার ছিল। সেই ফয়সালা হলেও ন্যায় ও যুক্তির নিরিখে আদালতের রায়ের কিছু অংশ প্রশ্নাতীত নয় বলেই মনে করছে সিপিএম। রায়ে মেনে নেওয়া হয়েছে, মসজিদ ধ্বংস আইন ভঙ্গের ঘটনা। সিপিএমের বক্তব্য, ওই ঘটনা সরাসরি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর উপরে আঘাত। ওই ফৌজদারি অপরাধে দোষীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছে তারা। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মন্দির হবে না মসজিদ হবে, এটা একটা দেশের প্রধান সমস্যা হতে পারে না! এখন রায় যখন হয়ে গিয়েছে, এই নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করে অর্থনীতি, মানুষের রুটি-রুজি, শিক্ষার মূল সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেওয়া হোক।’’

ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টই উল্লেখ করেছে, জমির অধিকার নিষ্পত্তি হতে পারে আইনি যুক্তিতে। রামলালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বা নির্মোহী আখড়া কেউই জমির স্বত্বের আইনি প্রমাণ দেখাতে পারেনি। অথচ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই রামলালাকে অযোধ্যার ওই জমি দিয়ে দেওয়া হল! এ রকম আরও অসঙ্গতি এই রায়ে আছে।’’ আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরীর বক্তব্য, এই রায়ের বিরোধিতার সুযোগ না থাকলেও এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই রায়কে নিজেদের উদ্দেশ্যে কাজে লাগাবে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।

বামেদের সুরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এ দিন বলেছেন, ‘‘আদালতের রায়কে আমরা সকলেই স্বাগত জানাচ্ছি। তবে ফয়সালা হলেও ন্যায় কতটা হয়েছে, সেই প্রশ্ন আছে।’’ লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কয়েক দিন ধরে এমন বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছিল তাতে মনে হচ্ছে, রায় কেমন হবে, কেন্দ্রের সরকার যেন আগেই জানত! আদালতের রায় এক রকম, মানুষের অন্তরের রায় এক রকম। দু’টো রায়ের মধ্যে সমতা আনা দরকার।’’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রের সম্পাদক অমিয় সরকার রায়কে প্রত্যাশিত ভাবেই স্বাগত জানিয়েছেন। আবার জামাত-এ ইসলামি হিন্দের রাজ্য সম্পাদক আব্দুল রফিক বলেন, ‘‘রায়ে এটা স্পষ্ট যে, মসজিদের কাঠামো কোনও মন্দির ভেঙে তৈরি হয়নি। সেখানে নিয়মিত নমাজ পড়া হত। তার পরেও তা রামলালাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনাকাঙ্খিত এবং ন্যায়ের পরিপন্থী।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘মুসলিম ভাইদের আবেদন জানাচ্ছি, তাঁরা যেন ধৈর্য ধরেন এবং কোনও ভাবেই উত্তেজনার শিকার না হন।’’ নাখোদা মসজিদের ইমাম সফিক কুরেশিও দেশে সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement