ফাইল চিত্র।
সদ্যসমাপ্ত কলকাতা পুরসভার ভোটে আনুষ্ঠানিক কোনও জোট ছিল না। আলাদা ভাবে লড়াই করেই ভোট বেড়েছে বাম ও কংগ্রেসের। কিন্তু শিলিগুড়ি পুরসভার আসন্ন নির্বাচনে ফিরতে পারে পুরনো ‘মডেল’। জোট গড়েই শিলিগুড়িতে পুরভোটে লড়ার লক্ষ্যে এগোতে শুরু করেছেন সিপিএম ও কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছে, শিলিগুড়ি, আসানসোল, বিধাননগর ও চন্দননগর— এই চার পুর-নিগমের ভোট হবে আগামী ২২ জানুয়ারি। মনোনয়ন-পর্ব শুরু হয়ে যাচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকেই। কমিশনের এই ঘোষণার আগেই এক প্রস্ত বৈঠক সেরে নিয়েছেন সিপিএম ও কংগ্রেসের জেলা নেতারা। বৈঠকে উঠে এসেছে, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সেখানে বড় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিজেপি। আবার বিধানসভার উপনির্বাচন এবং সাম্প্রতিক কলকাতার পুরভোটে বিপুল সাফল্যের পরে তৃণমূলও বাড়তি উদ্যম নিয়ে শিলিগুড়ি দখল করতে ঝাঁপাবে। এই প্রেক্ষিতে বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় বাম ও কংগ্রেসের জোট গড়ে লড়াই করাই শ্রেয়। শিলিগুড়ির ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কে কত এবং কোন আসনে লড়বে, সেই আলোচনা অবশ্য এখনও শুরু হয়নি।
পুরভোটে জোট হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তের ভার জেলা নেতৃত্বের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য সিপিএম ও প্রদেশ কংগ্রেস। ফলে, কলকাতায় না হলেও শিলিগুড়ি বা অন্যত্র পরিস্থিতির বিচারে জোট করতে সমস্যা হবে না বলেই দু’দলের স্থানীয় নেতৃত্বের মত। জোটের ভিত তৈরির বৈঠকে ছিলেন সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকারেরা। জোট সংক্রান্ত প্রশ্নে অশোকবাবুর জবাব, ‘‘একটা আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে, তখন বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবুরও বক্তব্য, ‘‘আমরা বামেদের সঙ্গে জোট করেই লড়তে চাই। কে কত আসনে প্রার্থী দেবে, কথা বলে সেই প্রক্রিয়া দ্রুত সেরে ফেলা হবে।’’ বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস সমঝোতা হওয়ার আগেই রাজ্য রাজনীতিতে চর্চায় উঠে এসেছিল ‘শিলিগুড়ি মডেল’। তবে ২০১৫ সালের সেই পুরভোটে প্রাক্-নির্বাচনী আসন সমঝোতা হয়নি। ভোটের দিন শাসক দলকে ‘ঠেকাতে’ একসঙ্গে ময়দানে নেমেছিলেন বিরোধী শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের পরে বাম ও কংগ্রেস মিলিত ভাবেই বোর্ড গড়েছিল, মেয়র হয়েছিলেন অশোকবাবু। এ বার বিজেপির ‘শক্তি’ মাথায় রেখে আগেই সমঝোতা করে রাখতে চাইছে তারা।
অশোকবাবু নিজে পুরভোটে প্রার্থী হবেন কি না, তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত নয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনা করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সিপিএম সূত্রের খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ফোন করে অশোকবাবুর ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে অবশ্য সরাসরি কিছু বলেননি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের প্রাক্তন পুরমন্ত্রীকে বলেছেন শিলিগুড়িতে জেতার ভাবনা নিয়েই পূর্ণ উদ্যমে লড়াই করতে। বয়স-নীতির কারণে সম্প্রতি দলের দার্জিলিং জেলা কমিটি থেকে সরে গিয়েছেন অশোকবাবু। অণ্ডালের খান্দরায় সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্মেলনের অবসরে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমি ওঁকে সম্মেলন চলাকালীন বলেছিলাম, প্রার্থী হতে গেলে বয়সজনিত কোনও নির্দেশিকা দলের নেই। তাই দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। তখন তিনি দাঁড়াবেন না বলেছিলেন। এখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজস্ব উদ্যোগে তাঁকে ফোন করেছেন। এতে অসুবিধার কিছু নেই।’’