TMC

শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠতা এড়িয়েই পদপ্রাপ্তি

উল্লেখযোগ্য ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ নন, এমন নেতাদের ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলে পুরোভাগে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে যে জেলা পর্যবেক্ষক পদে শুভেন্দু ছিলেন, সেই পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০০:০৫
Share:

শুভেন্দু অধিকারী—ফাইল চিত্র

সভাপতি বদল তো বটেই, জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে ভারসাম্যের খোঁজে আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরও রাজ্য কমিটিতে জায়গা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর উল্লেখযোগ্য ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ নন, এমন নেতাদের ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলে পুরোভাগে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে যে জেলা পর্যবেক্ষক পদে শুভেন্দু ছিলেন, সেই পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে।
জেলা তৃণমূলের অন্দরের খবর, টিম- পিকে’র রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়েই লোকসভায় ঘা খাওয়া জঙ্গলমহলে দলের রদবদল হয়েছে। জেলা সভানেত্রী বিরবাহা সরেনের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও তিনি রাজনীতিতে দক্ষ নন। তাই বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে সরিয়ে ‘আদিবাসী’ মুখ দুলাল মুর্মুতে আস্থা রাখা হয়েছে। নয়াগ্রাম বিধানসভা আসনে ফের কি টিকিট পাবেন দুলাল? দলেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
আদিবাসী প্রতিনিধি ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা ও কুড়মি মুখ গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোকে রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় ওই দু’টি আসনে নতুন কেউ টিকিট পেতে পারেন। সুকুমারের সঙ্গে এক সময় শুভেন্দুর খুবই সখ্য ছিল। জানা যাচ্ছে, পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুকুমারের ঘনিষ্ঠতায় ক্ষুব্ধ হন শুভেন্দু। শুভেন্দু জেলা পর্যবেক্ষক থাকাকালীন তাঁর কর্মসূচিতে সুকুমার যাননি। আবার চূড়ামণিও শুভেন্দুর অনুগামী নন। বরং দুলালের সঙ্গে শুভেন্দুর ভাল সম্পর্ক ছিল। হাইস্কুল-শিক্ষক দুলাল বিধায়ক হওয়ার পরে কাঁথির স্কুল থেকে তাঁকে নয়াগ্রামের স্কুলে বদলি করার ক্ষেত্রে শুভেন্দুর ভূমিকার কথাও শোনা যায়। তবে দুলাল বিশেষ কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াননি।
নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উজ্জ্বল দত্তও এক সময় ছিলেন শুভেন্দুর অনুগামী। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনিও পার্থের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। তাঁর সঙ্গে জেলা কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাহাতোকে। অজিত বিরবাহার অনুগামী। এর ফলে জেলার রাজনীতিতে প্রচ্ছন্ন ভাবে জেলা চেয়ারম্যান বিরবাহারও কিছুটা গুরুত্ব বজায় থাকল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ দিকে, জনগণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোকে জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বে নিয়ে আসার ভাবনাচিন্তা থাকলেও আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের একাংশ ছত্রধরকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ফলে, আপাতত ছত্রধরকে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদকের পদ দিয়ে তুষ্ট করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, যুব তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদাকে সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাঁকরাইল ব্লক যুব কার্যকরী সভাপতি শান্তনু ঘোষ নতুন জেলা যুব সভাপতি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যুবশক্তি কর্মসূচির সফল রূপায়ণের পুরস্কার পেলেন শান্তনু। আর দেবনাথের বিরুদ্ধে জামবনির রাস্তা দিয়ে বেআইনি বালি গাড়ি যাতায়াতের অভিযোগ ছিল।
সামগ্রিক ভাবে এই রদবদলে শুভেন্দুর ক্ষমতার পরিসর সঙ্কুচিত হওয়ায় তাঁর অনুগামীরা ক্ষুব্ধ। ফেসবুকে কেউ কেউ লিখছেন, ‘পিকে ঘুঘু দেখেছ, ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি, এ বার দেখবে।’ নয়া সভাপতি দুলাল অবশ্য বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তাঁর সৈনিক হিসেবেই সবাইকে নিয়ে দলের কাজ করব।’’
পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ফের অজিত মাইতির উপরেই আস্থা রেখেছেন মমতা। সেখানেও যতটা ‘উচ্ছ্বসিত’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা, ঠিক ততটাই ‘নিষ্প্রভ’ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠরা। সম্প্রতি মেদিনীপুরে ‘বাংলার যুবশক্তি’র মঞ্চে অভিষেকের খোলাখুলি প্রশংসা করেছিলেন অজিত। সেই ‘আনুগত্যে’রই পুরস্কার তিনি পেলেন কিনা, জল্পনা দলের অন্দরেই। অজিত একদা শুভেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। পরে শিবির পাল্টান বলে দলে জল্পনা। এখানে দলের জেলা চেয়ারম্যান পদেও রদবদল হয়নি। দীনেন রায়কেই জেলা চেয়ারম্যান করা হয়েছে। জেলা কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে মানস ভুঁইয়া, শিউলি সাহা এবং প্রদীপ সরকারকে। ১৫টি বিধানসভার দায়িত্ব তিনজন কো-অর্ডিনেটরের মধ্যে সমবণ্টন করা হয়েছে। মানস দেখবেন কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, দাঁতন, সবং, পিংলা। প্রদীপের দায়িত্বে মেদিনীপুর, খড়্গপুর সদর, খড়্গপুর গ্রামীণ, দাসপুর, শালবনি। আর শিউলি দেখবেন ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, কেশপুর, ডেবরা। অজিত জানান, শীঘ্রই কো-অর্ডিনেটরদের নিয়ে বৈঠক করবেন। নবনিযুক্ত কো-অর্ডিনেটরদের অন্যতম শিউলি বলেন, ‘‘কাজ করার পরিবেশটা দিতে হবে। যদি পরিবেশ পাই, চেষ্টার খামতি রাখব না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের যুব সংগঠনের জেলা সভাপতি পদেও রদবদল হয়নি। প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীই ফের যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি হয়েছেন। যুব তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন কেশিয়াড়ির কল্পনা শীট। কল্পনা অন্যতম সম্পাদক হয়েছেন। রাজ্য কমিটিতে মেদিনীপুরের নির্মাল্য চক্রবর্তীর জায়গা না পাওয়া নিয়ে জল্পনা রয়েছে। নির্মাল্য যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। তিনি ‘বাংলার যুবশক্তি’র রাজ্য মনিটরিং টিমের অন্যতম সদস্যও। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, শুভেন্দু- অনুগামীদের ‘ব্যাকফুটে’ পাঠিয়ে এখানেও প্রভাব বাড়িয়েছেন অভিষেক-অনুগামীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement