গত বছর থেকে ডিএ-র দাবিতে চড়া সুরে আন্দোলন করে আসছেন সরকারি কর্মচারীরা। নিজস্ব চিত্র।
মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে ধর্না দিতে এ বার দিল্লি চললেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা। শনিবার বিকেলে হাওড়া থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন মঞ্চের নেতারা। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধি আগামী কাল দিল্লি পৌঁছবেন। রবিবার মঞ্চের ৩০০ জনের আরও একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি যাবেন। ১০ এবং ১১ এপ্রিল তাঁরা একযোগে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না দেবেন। ইতিমধ্যে ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ১৭ এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসবেন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্য। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ১৭ এপ্রিল কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাজ্যকে। সেই আলোচনার আগেই রাজধানীতে গিয়ে ডিএ-র দাবিতে সরব হবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
ওই দু’দিন দিল্লিতে থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডেপুটেশন দেবেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মচারীরা। সেই দাবিই দেশের রাষ্ট্রপতি-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে তুলে ধরবেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীরা তাঁদের জন্য সময় বরাদ্দ করেছেন বলেই সূত্রের খবর। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য দিল্লিতে ধর্না দিতে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকার-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের দাবি মতো ডিএ পাচ্ছেন। বঞ্চিত থাকছে কেবল পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা। তাই আমরা আমাদের কথা রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের জানাতে যাচ্ছি।’’
গত বছর থেকে ডিএ-র দাবিতে চড়া সুরে আন্দোলন করে আসছেন সরকারি কর্মচারীরা। সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সংগ্রামী মঞ্চের দাবি, কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের। বর্তমানে ৬ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, প্রাপ্য আরও ৩৬ শতাংশ ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনের দিন ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই ঘোষণার পর ২৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার অনুমোদিত স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পঞ্চায়েত কর্মী, পুরসভা, পুরনিগম এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। ১ মার্চ থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন কর্মীরা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল মমতার সরকার। এ বারের বাজেটে আরও ৩ শতাংশ যুক্ত হয়েছে। তাই মার্চ মাস থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।
২৪ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞপ্তির পরেও ক্ষোভ কমেনি রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের। ৬ শতাংশ হারে ডিএ-তে খুশি নন সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র। তাই এ বার সেই দাবিতে দিল্লি গেলেন তাঁরা। ডিএ-র দাবিতে গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে দু’দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীরা। ডিএ-র দাবিতে গত ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, শহিদ মিনারে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ধারাবাহিক ভাবে ডিএ-র দাবিতে ধর্না দিয়েছে। ৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৪২ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) পাবেন চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। তাই ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৩৮ শতাংশের বদলে ৪২ শতাংশ ডিএ পাবেন। আর এই ঘটনায় রাজ্য সরকার কর্মচারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে।