দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। — নিজস্ব চিত্র।
চার জনজাতি মহিলাকে দণ্ডি কাটিয়ে দলে ফেরানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শুক্রবার রাতেই সরব হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এ বার বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াল বিজেপিও। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। আদিবাসী মোর্চার নেতৃত্বে হয় ওই বিক্ষোভ। রবিবার জেলার সব থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে জানিয়েছে মোর্চা।
শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। সঙ্গে ছিলেন তপনের বিধায়ক বুধরাই টুডু। ছিলেন মালদহ জেলার হাবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মুও। পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ‘‘চরম নিন্দনীয় ঘটনা। এক জন নেত্রী কী ভাবে বলতে পারেন, বিজেপি থেকে নাকখত দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করালাম। মহিলাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার এই সরকারকে কারা দিল? পুলিশ পর্যন্ত ধরেনি কাউকে। আমরা এই জেলার প্রতিটি থানায় রবিবার বিক্ষোভ দেখাব। যে ভাবে আদিবাসী মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে, বিক্ষোভ দেখাব। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মহিলাদের সম্মান নিয়ে কেউ খেলতে পারে না।’’
বিধায়ক জুয়েলও একহাত নিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। পূর্বতন বাম সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সারা বাংলার মানুষ দেখেছেন, দেশের মানুষ দেখেছেন। যেখানে আদিবাসীর উপর কেউ হাত চালাতে পারেন না, সেখানে শাসকদল আদিবাসী মহিলাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। ৩৪ বছর সিপিএম করত। এখন তৃণমূল। যারা আদিবাসী মহিলাদের ধমকাচ্ছে, চমকাচ্ছে, তাদের সরে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে জানাব আদিবাসী মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে তপন বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক বুধরাইয়ের উপস্থিতিতে বিজেপির জেলা মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে গোফানগর অঞ্চলের প্রায় ২০০ জন মহিলা এবং তাঁদের পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শনকইর গ্রামের বাসিন্দা মার্টিনা কিস্কু, শিউলি মারডি, ঠাকরান সোরেন এবং মালতী মুর্মু। সে কথা প্রকাশ্যে আসতেই চার আদিবাসী মহিলাকে বালুরঘাট নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল মহিলা মোর্চার জেলা সভাপতি প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় তাঁদের। অভিযোগ, বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কাটিয়ে আবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো হয় তাঁদের। চার আদিবাসী মহিলার দণ্ডি কাটার ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘দলে কাউকে যোগ দেওয়াতে হলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না। দণ্ডি কাটিয়ে দলে যোগ দেওয়ানোর কোনও রীতি তৃণমূলে নেই। কেউ যদি এটা করিয়েও থাকেন, তা হলে অন্যায় করেছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
চার মহিলাকে দণ্ডি কাটানোর ভিডিয়ো টুইট করে ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যিনি ঘটনাচক্রে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদও বটে। সুকান্তের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস আদিবাসী বিরোধী। আদিবাসীদের অসম্মান করতে যা করার, তৃণমৃল তা-ই করেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়কে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এর বদলা নিতে হবে।’’