Nandigram

Farm Laws: ‘যোদ্ধা’দের কুর্নিশ! কৃষক-লড়াইয়ের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পথিকৃৎরা

নন্দীগ্রাম হোক বা দিল্লির উপকণ্ঠ— দুই আন্দোলনের মধ্যেই অভাবনীয় মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পথিকৃৎরা।

Advertisement

সুমন মণ্ডল 

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ২২:৫১
Share:

নন্দীগ্রামে মিছিলে শামিল জমি আন্দোলনের নেতা আবু তাহের। নিজস্ব চিত্র।

দূরত্বটা বহু যোজনের। রয়েছে প্রায় দেড় দশকের ব্যবধান। তবে শুক্রবার সকালের একটি ঘোষণা যেন সব ফারাক মিটিয়ে এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে দুই আন্দোলনের যোদ্ধাদের। নন্দীগ্রাম হোক বা দিল্লির উপকণ্ঠ— দুই আন্দোলনের মধ্যেই অভাবনীয় মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পথিকৃৎরা। তাঁদের মতে, নন্দীগ্রাম বা দিল্লির উপকণ্ঠ, দুই আন্দোলনই কৃষকদের স্বার্থ বাঁচানোর লড়াই। দুই আন্দোলনের ফলেই রাষ্ট্রশক্তি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণামাত্রই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পথিকৃৎদের মধ্যে খুশির ঝলক দেখা দিয়েছে। তাঁদের সাফ কথা, “দাবি ন্যায়সঙ্গত হলে এবং জনগণ দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে রুখে দাঁড়ালে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে জয় আসবেই। শুক্রবার তা আরও এক বার প্রমাণিত।”

প্রায় দেড় দশক আগে কৃষিজমি, জীবন-জীবিকা বাঁচাতে রাষ্ট্রশক্তির বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই চালিয়ে নজির গড়েছিল নন্দীগ্রাম। প্রায় দেড় দশক পর প্রায় একই ছবি দিল্লির উপকণ্ঠে। গোটা বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে রাষ্ট্রের পেশিশক্তি, বাধাবিপত্তি, সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও হাজার হাজার কৃষকের অনমনীয় আন্দোলন। আর দু’টি ক্ষেত্রেই কৃষকদের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করেছে— এ কথা বলছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কারিগরেরা। জমি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ভবানী দাস কথায় উঠে এল দুই ‘যুদ্ধে’র তুলনা। তিনি বলেন, “দিল্লির কৃষক আন্দোলনের এই জয় প্রায় দেড় দশক আগে ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথাই বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে। দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকেরা যে ভাবে কেন্দ্রের তথা একাধিক রাজ্যের পেশিশক্তি, আইনি ঝামেলা, আদালতের বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে বা কয়েক শতাধিক কৃষকের প্রাণের বিনিময়ে এই জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।” নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি রোমন্থন করে ভবানীর দাবি, “২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে এসইজেড গড়ার নামে তৎকালীন রাজ্য সরকার এক লপ্তে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার একর কৃষিজমি কেড়ে নেওয়ার ফন্দি এঁটেছিল। সে দিন শতাধিক কৃষক তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে সরকারি পেশিশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। রাষ্ট্রশক্তির গুলি-বন্দুকের পাশাপাশি অপরাধীদেরও মাঠে নামিয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার।’’ তিনি বলেন, ‘‘টানা এক বছর ধরে রক্ষক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে সেই লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কৃষকেরা। ঠিক যে ভাবে আজ দিল্লির কৃষকেরাও জয় ছিনিয়ে আনলেন।’’

Advertisement

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আর এক পথিকৃৎ নন্দ পাত্রের মতে, দুই আন্দোলনের মধ্যেই অভাবনীয় মিল রয়েছে। তাঁর মতে, “দু’টি আন্দোলনেরই মূল উদ্দেশ্য, কৃষকদের স্বার্থ বাঁচানোর লড়াই। এবং আরও বড় সামঞ্জস্য হল, এই অনমনীয় লড়াইয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে রাষ্ট্রশক্তি।” শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা নেতা সবুজ প্রধান। তিনি বলেন, “কৃষকদের স্বার্থে আমরা সব সময় আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকেছি। নন্দীগ্রামে আন্দোলনে শামিল হওয়ার জেরে বহু ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছি। ঘরবাড়ি ভাঙচুর থেকে বহু আন্দোলনকারীর প্রাণ গিয়েছে। তবুও নন্দীগ্রাম যেমন পিছু হটেনি, দিল্লির উপকণ্ঠে থাকা কৃষকেরাও শত লাঞ্ছনার মধ্যেও আন্দোলন অনড় থেকেছেন। তাই নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারী হিসেবে দিল্লির ‘যোদ্ধা’দের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাই।’’

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই নন্দীগ্রামে মিছিলে শামিল হন জমি আন্দোলনের নেতা আবু তাহের-সহ শতাধিক মানুষ। কাঁধে লাঙল নিয়ে দিল্লির কৃষকদের আন্দোলনের ‘জয়’কে অভিবাদন জানান তাঁরা। এমনকি, ২০০৭ সালে যে বামেরা এসইজেড গড়তে চেয়েছিলেন, সেই দলের সমর্থকেরাও দিল্লির কৃষকদের লড়াইকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেন নন্দীগ্রামে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement