লক্ষ্মী তুঙ্গ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দেড় বছর লড়াইয়ের শেষে জয় এসেছে। এ বার নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় লড়াইয়ের মাটি নন্দীগ্রামের বধূ লক্ষ্মী তুঙ্গ।
শুক্রবার দুপুরে হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিযুক্ত স্কুলের গ্রুপ ডি স্তরের ১৯১১ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। যাঁর করা মামলার প্রেক্ষিতে এই রায়, তিনি নন্দীগ্রামের মনোহরপুরের বাসিন্দা, ৩২ বছরের গৃহবধূ লক্ষ্মী তুঙ্গ। রায়ের পরে খুশি তিনি। তবে বলছেন, ‘‘কারও চাকরি চলে যাক, এটা আমি চাইনি। আমার লড়াই ছিল, যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পাক। তারই অপেক্ষায় আছি।’’
লক্ষ্মীর স্বামী সরকারি দফতরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। টানাটানির সংসারে কিছুটা সুরাহার জন্যই স্কুলের গ্রুপ ডি স্তরে চাকরির চেষ্টা করেছিলেন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ এই যুবতী। ২০১৬ সালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে হয় লিখিত পরীক্ষা। সে বছরই জুলাইয়ে প্রকাশিত সফলদের তালিকায় নাম ছিল লক্ষ্মীর। অগস্টে বাঁকুড়ায় মৌখিক পরীক্ষা দেন। চূড়ান্ত ফল বেরোতে দেখা যায়, সার্বিক ভাবে সফলদের তালিকায় লক্ষ্মী ২৪৯ নম্বরে। মহিলাদের মধ্যে ক্রমিক সংখ্যা ৬৯।
লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘তখন তো গোটা সংসারে খুশির ঢেউ। দিন গুনছিলাম নিয়োগপত্র পাওয়ার। কিন্তু দিনের পর দিন গড়ায়। নিয়োগপত্র আর আসে না। শিক্ষা দফতরে ছোটাছুটি করতে থাকি। এক সময় জানতে পারি, পুরো প্যানেলটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হতাশায় ভেঙে পড়ি।’’ এর পরে কানাঘুষোয় লক্ষ্মী জানতে পারেন, তাঁরই পরিচিত কয়েক জন, র্যাঙ্ক তাঁর থেকে নীচে থাকলেও নিয়োগপত্র পেয়েছেন। লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘টাকার বিনিময়ে এ সব হয়েছিল। কলকাতায় দৌড়াদৌড়ি করে জানলাম, নিয়োগপত্রগুলি ২০২০ সালের ২০ মার্চের। নিশ্চিত হলাম, মারাত্মক জালিয়াতি হয়েছে নিয়োগে। প্রতারিত হয়েছি। এর পরেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হই।’’ ২০২১ সালে ২২ নভেম্বরে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন লক্ষ্মী। ২৪ নভেম্বর শুনানি শুরু হয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তারই রায় এসেছে অবশেষে।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘আদালতের রায় বুঝিয়ে দিচ্ছে, তৃণমূল সরকার টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করেছে। আমরা চাই আদালতের পর্যবেক্ষণে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হোক। কারণ, রাজ্য সরকারকে দায়িত্ব দিলে আবার টাকার বিনিময়েই নিয়োগ হবে।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। ফলে, এ সব বিজেপির মুখে মানায় না। এখানে প্রচুর নিয়োগ হচ্ছে। মেধার ভিত্তিতেই হচ্ছে। কোথাও ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সরকার ঠিক করে নেবে।’’