হাকিম হাজির, দেখা মেলেনি বহু উকিলেরই

বিচারপতি ও বিচারকেরা যথারীতি হাজির ছিলেন। কিন্তু এলেন না অধিকাংশ আইনজীবীই। ফলে মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধেও সেই কর্মনাশের ‘সংস্কৃতি’ই দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ব্যাঙ্কশাল, আলিপুর, শিয়ালদহ-সহ সব আদালতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

বিচারপতি ও বিচারকেরা যথারীতি হাজির ছিলেন। কিন্তু এলেন না অধিকাংশ আইনজীবীই। ফলে মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধেও সেই কর্মনাশের ‘সংস্কৃতি’ই দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ব্যাঙ্কশাল, আলিপুর, শিয়ালদহ-সহ সব আদালতে। জেলার আদালতও সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনও তাগিদ দেখাল না।

Advertisement

বন্‌ধ বা ধর্মঘট যে বা যারাই ডাকুক, নির্বিচার ছুটি উদ্‌যাপনই এ রাজ্যের ‘সংস্কৃতি’! আদালতও যে তার বাইরে নয়, বরাবরের মতো এ দিনও তা প্রমাণিত হয়েছে মূলত উকিলদের গরহাজিরায়। বেশির ভাগ আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় অধিকাংশ মামলার শুনানি হয়নি। বিচারপতি বা বিচারকেরা সেই সব মামলা হয় মুলতুবি করেছেন অথবা আগামী সপ্তাহে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। বন্‌ধে ঝামেলার ঝুঁকি সত্ত্বেও বিচারের আশায় যাঁরা আদালতে এসেছিলেন, তাঁদের ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। ঘুরেফিরে এসেছে সেই প্রশ্ন, যাঁর মামলা, আদালত তো তাঁর মুখ থেকেই সব শুনে নিতে পারে। উকিলের মুখ চেয়ে থাকা কেন?

কিছু কিছু মামলার শুনানি যে হয়নি, তা নয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ছিল একপাক্ষিক। ফলে ফয়সালা তো দূরের কথা, অন্য পক্ষের কৌঁসুলি না-থাকায় আইনি বিতণ্ডাও হয়নি। হাইকোর্ট এবং অন্যান্য আদালতের আইনজীবী সংগঠন আগেই বিচারপতি ও বিচারকদের অনুরোধ করেছিল, এক পক্ষের আইনজীবী অনুপস্থিত থাকলে যেন একতরফা কোনও নির্দেশ বা রায় দেওয়া না-হয়। তা মানা হয়েছে।

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর সোমবার থেকে পাঁচ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। সেই জন্য এ দিন তিনি আসেননি। বিচারপতি অসীম রায়, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং অন্যান্য বিচারপতি অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে পৌঁছে যান হাইকোর্টে। অন্যান্য আদালতেও বিচারকদের উপস্থিতির ছবিটা একই রকম ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে সারা দিনই মামলার কাজকর্ম হোঁচট খেযেছে পদে পদে।

বিভিন্ন জেলার আদালতেও এ দিন বন্‌ধ-ছুটির ছবিই বড় হয়ে উঠেছে। বর্ধমান জেলা আদালতে কাজ হয়নি বললেই চলে। যদিও সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারকেরা পৌঁছে যান। কাজ না-করার জন্য তাঁদের কাছে আবেদন জানান কংগ্রেস-সমর্থক কয়েক জন আইনজীবী। বিচারকেরা অবশ্য বিকেল পর্যন্ত আদালতেই ছিলেন। আইনজীবী ও আদালতের অন্যান্য কর্মীর উপস্থিতি ছিল নগণ্য।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতেও কংগ্রেসকর্মীরা এ দিন বিচারকদের এজলাসে না-বসতে অনুরোধ করেন। বিচারকেরা অবশ্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ আইনজীবী কাজে যোগ দেননি। কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে কর্মীরা এসেছিলেন। কিন্তু ল’ক্লার্ক ও আইনজীবীরা না-আসায় কাজকর্ম আদৌ এগোয়নি। বন্‌ধের আহ্বায়ক কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলা মুর্শিদাবাদের জজ কোর্ট এবং বহরমপুর সিজিএম আদালতেও কোনও কাজ হয়নি। রামপুরহাট আদালত খোলা ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে কোনও মামলাই ওঠেনি। হাজিরা দিতে এসে অনেককে ফিরে যেতে হয়। হাওড়ার উলুবেড়িয়া আদালতে কয়েকটি মামলা ওঠে। কিন্তু উকিলদের গরহাজিরায় শুনানি এগোয়নি।

ব্যতিক্রমও ছিল কিছু। দু’পক্ষের আইনজীবী উপস্থিতি থাকায় কিছু মামলার শুনানি হয়েছে বিভিন্ন আদালতে। হাইকোর্টে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। বাংলা বন্‌ধ ডেকেছিল তাঁরই দল। চিদম্বরম কিন্তু নির্ধারিত সময়েই মামলা লড়তে হাজির হন হাইকোর্টে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সেই মামলায় যোগ দেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মামলার শুনানিও হল।

আর তৃণমূলের হাইকোর্ট শাখার সভাপতি ললিতমোহন মাহাতোর দাবি, ‘‘হাইকোর্টে সরকার পক্ষের সব কৌঁসুলিই এ দিন মামলা লড়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement