বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠল হাই কোর্টে। ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের পর এ বার হাই কোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী কিশোর দত্ত বিচারপতি অমৃতা সিন্হার বেঞ্চে সওয়াল করে বলেন, “বিচারপতি ইন্টারভিউতে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে বলেছেন। তার পর এই নির্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এই মামলায় তাঁকে (অভিষেক) যুক্ত করা হল না, বক্তব্য শোনা হল না, হঠাৎ একটা নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেল! এই মামলায় সঙ্গে অভিষেক কী ভাবে যুক্ত, তা পরিষ্কার নয়।”
আইনজীবী দত্তের সওয়াল, “বিচারপতির উচিত নিজের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার। সুপ্রিম কোর্ট একটি পর্যবেক্ষণে বলেছে, বিচারপতির উচিত তিনি নিরপেক্ষ কি না সে সম্পর্কে নিজেকে নিজের প্রশ্ন করা। অন্য ব্যক্তি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করলে বিচারপতির উচিত তার কারণ খুঁজে বার করা। ওই ব্যক্তিকে দোষারোপ করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে বিচারপতির নিরপেক্ষতা কোথায়? ইডি যখন এই মামলায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, তখনই বিচারপতির এই মামলা থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ, তিনি অভিষেকের বিরুদ্ধে টিভি চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। বিচারপতি যে মন্তব্যই করুন, তার সত্য-মিথ্যা জানি না। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। বিচারপতির নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, তিনি নিরপেক্ষ কি না?” অভিষেকের আইনজীবীর কথায় উঠে আসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিতর্কিত টেলিভিশন ইন্টারভিউ এবং সেই সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দিল। তা দেখে খারাপ লাগে। মনে হল আমাদের হাই কোর্টের গরিমা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এটা বিচারব্যবস্থার চিন্তার কারণ। তাই বিচারপতির ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকা উচিত বলে মনে করি।” আইনজীবী দত্তের কথায়, “এক জন বিচারপতি শুধু নিজেকে বর্ণনা করছেন না, বিচারব্যবস্থাকে সমাজের কাছে তুলে ধরছেন।”
অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিষ্কার নয় বলেও আদালতে জানান আইনজীবী দত্ত। তাঁর কথায়, “বলা হচ্ছে, জনসভায় তাঁর বক্তৃতা দেখে কুন্তল ঘোষ এমন অভিযোগ করেছেন। জেলে কি টিভি ছিল?” অভিষেকের আইনজীবীর দাবি, এই মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। তার কারণ হিসাবে তিনি জানান, এই মামলার বিচার করার জন্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নথিভুক্ত হয়নি। তাঁর যুক্তি, সিবিআই এবং ইডির মামলা হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে হয়। আইনজীবী দত্তের মতে, বিচার্য বিষয়ের বাইরে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মামলায় নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা নিয়ে অভিষেকের আইনজীবী বলেন, “আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হচ্ছে। তা নিয়ে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু শুধু নজরদারি নয়, আদালতকে তদন্তে তদারকিও করতে দেখা গিয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই এবং ইডিকে ‘ইমিউনিটি’ দিয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থাকে ইমিউনিটি দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করি। আমাদের সংবিধান এবং আইন রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল এবং বিচারপতিকে ইমিউনিটি দিয়েছে। কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দেয়নি।”
শুক্রবার কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ দেয়নি কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবারের শুনানিতে অভিষেকের আইনজীবী হাই কোর্টের পুরনো নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানান। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দেওয়ার আর্জি জানান তাঁর আইনজীবী। এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থা যাতে চরম পদক্ষেপ নিতে না পারেন, তার জন্যও আবেদন করেন অভিষেকের আইনজীবী। বিচারপতি অমৃতা সিন্হা জানান, সব পক্ষের বক্তব্য না শুনে এই মুহূর্তে রক্ষাকবচ দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আদালতের দরজা ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন খোলা থাকবে। প্রয়োজন মনে করলে যখন খুশি আসবেন। কিন্তু কোনও রক্ষাকবচ নয়।” সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।