কলকাতা হাই কোর্ট ফাইল চিত্র
পুলিশ বলছে ভোট পরবর্তী হিংসায় রাজ্যে কোনও ধর্ষণ হয়নি। কেবল শ্লীলতাহানির কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আর কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী হিংসায় খুন হয়েছেন ২৯ জন। কমিশন বলছে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৫২টি। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে এই ভাবেই রাজ্যের পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তথ্য তুলে ধরেন মামলাকারীদের আইনজীবী মহেশ জেঠমলানি। অন্য দিকে, আইন মেনে কাজ করেনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, এই দাবি তুলে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাঁর দাবি, আইন মেনেই যখন কাজ হয়নি, তখন সেই রিপোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই!
বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। উচ্চ আদালত হিংসার তথ্য খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে। সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার রিপোর্ট তৈরি করে কমিশন। এমনকি তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ওই রিপোর্টে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। সেই রিপোর্ট ঘিরেই শুরু হয় তরজা। সোমবার আদালতে জেঠমলানি বলেন, ‘‘খুন ও ধর্ষণ এই দু'টি বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কমিশনের রিপোর্টের সঙ্গে পুলিশের রিপোর্টের ৬০ শতাংশ ব্যবধান রয়েছে। পুলিশের খাতায় তো কোনও ধর্ষণের অভিযোগই নেই। অথচ তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি রয়েছে।’’ আবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আক্রমণকারীদের অভিযোগ থানায় নথিভুক্ত না হলে, তারা পুলিশ সুপারের কাছে যেতে পারত। সেখানেও এফআইআর না হলে, জেলা আদালতে যেতে পারত।’’
আবার কমিশনের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিব্বল। তাঁর মতে, ‘‘১৯৯৩ সালের কমিশন আইন অনুযায়ী তদন্ত হয়নি। আইনের ১২ এবং ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে কমিশনের দলকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা চাইলে যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করতে পারে। এমনকি সেখানে সরকারি কর্তাদেরও ছাড় দেওয়ার কথা বলা নেই। অথচ তারা শুধু অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থেকেছে। যাদের ভূমিকা নিয়ে রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেই নেতা-মন্ত্রী বা পুলিশের কাছ থেকে কেন তথ্য সংগ্রহ করল না তারা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে কমিশনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। আদালত বলেছিল কমিটি অভিযোগ সংগ্রহ করবে এবং তা জমা দেবে। কিন্তু তারা একাধিক সুপারিশ করে। যা তাদের এক্তিয়ার ভুক্ত নয়।’’এ ছাড়া কমিশনের অনেক সদস্যের সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্ক রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।