চুরুলিয়ায় অটলবিহারী বাজপেয়ী। ফাইল চিত্র
মেঠো পথ ধরে গ্রামে ঢুকছিল পরপর গাড়ি। গোটা উনিশ গাড়ির কনভয়টি পৌঁছনোর পরে একটি গাড়ি থেকে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে নেমে এসেছিলেন তিনি। তাঁকে দেখতে তখন আশপাশের সব বাড়ির ছাদ কানায়-কানায় পূর্ণ। ১৯৯৯ সালের ২০ মে চুরুলিয়ায় এসে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটেতে ঢোকার আগে মাটিতে হাত ছুঁইয়ে প্রণাম করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী।
তখন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কবির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এসেছিলেন চুরুলিয়ায়। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুসংবাদ পৌঁছনোর পরে সে দিনের স্মৃতি বেশি করে মনে পড়ছে কবির পরিবারের সদস্যদের। প্রবীণ সদস্য রেজাউল করিম জানান, পরিবারের তরফে সে দিন তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তখন দেশের যুবকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মাধ্যমেই কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যেরা প্রধানমন্ত্রীকে চুরুলিয়ায় আমন্ত্রণ জানান। নজরুল অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, এক বার শুনেই তিনি চুরুলিয়ায় আসতে সম্মত হয়েছিলেন।’’
গ্রামের মানুষজনের কাছে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর গাড়ির কনভয় কবির জন্মভিটের বেশ কিছুটা আগেই দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তিনি হেঁটে যান কবির ভিটেতে। সেখানে করজোড়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। তার পরে কবিপত্নী প্রমীলা দেবীর সমাধিস্থল দেখতে যান। সেখানে মালা দেন, কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়েও থাকেন।
কবির জন্মভিটের একতলার একটি হলঘরে প্রধানমন্ত্রীর বসার জায়গা করা হয়েছিল। পরে এই ঘরটি কবির ব্যবহৃত জিনিসের সংগ্রহশালা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে এসে প্রথমেই কবির পরিবারের মানুষজনের সঙ্গে পরিচয় করেন। তাঁর ইচ্ছায় ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গেয়ে শোনান কবির নাতনি সোনালি কাজি। পরিবারের ছোটদের কবির জীবনি পড়ার পরামর্শ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।
রেজাউল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী সে দিন কবির ব্যবহৃত সামগ্রী ও ভিটে রক্ষণাবেক্ষণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চান। অর্থের সঙ্কটের কথা জানালে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে একটি খরচের হিসেব দিতে বলেন। রেজাউল বলেন, ‘‘আমরা তাঁকে প্রায় চার কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার একটি হিসেব দিই।’’ তিনি জানান, চুরুলিয়া থেকে ফিরে যাওয়ার সপ্তাহখানেক পরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুমোদনের চিঠি পাঠানো হয়। নানা জটিলতায় সেই টাকা এখনও নজরুল অ্যাকাডেমির হাতে আসেনি। কিন্তু চুরুলিয়ায় অটলবিহারী বাজপেয়ীর কাটিয়ে যাওয়া সেই ক’টা মুহূর্ত এখনও অমলিন এলাকার মানুষের কাছে।