প্রতীকী ছবি।
বঙ্গদেশের আগে সুজলা-সুফলা শব্দবন্ধের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জলাভূমি কি সত্যিই নিরাপদ? বুধবার আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবসে বঙ্গের জলাশয় নিয়ে আশঙ্কার কথাই বেশি শোনা গিয়েছে পরিবেশবিজ্ঞানী এবং পরিবেশকর্মীদের গলায়। সরকারি ঔদাসীন্যের অভিযোগও রয়েছে। এই ধারা বজায় থাকলে অচিরেই সুজলা বঙ্গদেশ শুধু ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে বলেও মনে করছেন অনেকে।
জলাভূমি সংরক্ষণে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা রামসর কনভেনশনের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পৃথিবীতে অরণ্যের থেকে তিন গুণ দ্রুত হারে বিলুপ্ত হচ্ছে জলাভূমি! গত ১২২ বছরে ৬৭ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গিয়েছে। এ রাজ্যেও বহু নদী কার্যত বিলুপ্তির পথে। পুকুর, দিঘি, বিলও বুজিয়ে নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। খোদ রামসর তালিকাভুক্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমিরও অনেক জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্য জলাভূমি কর্তৃপক্ষের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে পরিবেশকর্মীদের।
সরকারি কর্তাদের অবশ্য দাবি, রাজ্য জলাভূমি সংরক্ষণে সক্রিয়। ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। যদিও পরিবেশকর্মী নব দত্তের বক্তব্য, “প্রশাসনিক উদ্যোগ বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। খাস কলকাতাতে নিত্য জলা বোজানোর অভিযোগ ওঠে।”
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এবং সুন্দরবন, দুই রামসর তালিকাভুক্ত জলাভূমি। তবে তাদের যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নই তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। কারণ, দুটির সংরক্ষণেই বারবার আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, পরিবেশবিদ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ মারা যাওয়ার পর থেকে কার্যত অভিভাবকহীন হয়েছে সাড়ে বারো হাজার হেক্টর বিস্তৃত পূর্ব কলকাতার জলাভূমি।
বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত জলাভূমির দশা আরও খারাপ বলে পরিবেশকর্মীদের দাবি। উত্তরবঙ্গের পরিবেশকর্মী অনিমেষ বসু জানান, মানুষের অত্যাচারেই উত্তরবঙ্গের জলাভূমি শেষ হতে বসেছে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও কমবেশি একই হাল। অথচ পরিবেশবিদেরা জানান, এলাকার নিকাশি এবং কার্বন শোষণে জলাভূমি গুরুত্বপূর্ণ। জলাভূমির ক্ষতি হলে ঘোর বর্ষায় কী হতে পারে তা কলকাতা এবং শহরতলির মানুষ ভালই জানেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী বলছেন, জমির চরিত্র দ্রুত বদল হচ্ছে এবং তার ফলেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। তার উপরে বহু জলাভূমিতে সৌন্দর্যায়নের কাজ করতে গিয়ে জীববৈচিত্রকে নষ্ট করা হচ্ছে।