অভাবেই ভিন‌্দেশি রুহুলেরা

সাব্বি শেখ বলছেন, ‘‘অভাব আমাদের বিপদ তোয়াক্কা করতে শেখায়নি। তাই তো বার বার ছুটে যেতে হয় ভিন‌্দেশে!’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বাহালনগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০০
Share:

শেষ দেখা। বাহালনগরে। নিজস্ব চিত্র

এ দিনের ভোর যেন বড় বেশি কুয়াশায় ঢাকা। থম মেরে আছে গোটা গ্রাম। স্পষ্ট হয়নি আকাশ। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তখনই সাদা গাড়িগুলি একে একে গ্রামের ধুলো উড়িয়ে ঢুকতে শুরু করল গ্রামে। আর আধঘুমে থাকা গ্রাম ভেঙে পড়ল কান্নায়। কফিনগুলো মৃত শ্রমিকদের বাড়িতে পৌঁছনো মাত্র সেই স্তব্ধ ভোর যেন এক লহমায় দিনের আলোর কড়া বাস্তবের সামনে এসে দাঁড়াল।

Advertisement

কান্না হা-হুতাশ-আক্ষেপের ভিড় ঠেলে গ্রামে তখন একে একে ঝুঁকছে নেতা-মন্ত্রীদের গাড়ি। আশপাশের সব গ্রামের রাস্তা যেন মিশেছে বাহালনগরে। জাতীয় সড়কের উপরে তখন ভোরের বাস থমকে গেছে। রাস্তা উজিয়ে কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন রফিক-কামিরুদ্দিনকে শেষবারের মতো দেখতে।

তবুও কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। সকলের চোখে মুখেই শোকের ছায়া নিয়েও শান্ত। মোরসালিমের বাড়ির সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বয়োবৃদ্ধ আফরোজা বেওয়া। নৈমুদ্দিন শেখের বাড়িতে অঝোরে কাঁদছেন বন্ধু রুহুল শেখ, ‘‘কত বার নিষেধ করলাম!’’ তার পরে নিজেই তার ব্যাখ্যা খুঁজছেন যেন, ‘‘পেটের জ্বালা বড় জ্বালা গো!’’ সাব্বি শেখ বলছেন, ‘‘অভাব আমাদের বিপদ তোয়াক্কা করতে শেখায়নি। তাই তো বার বার ছুটে যেতে হয় ভিন‌্দেশে!’’

Advertisement

ভিড় সামলাতে এক সময় রফিকুল শেখের দেহ বাড়ি থেকে বের করে এনে রাখতে হয়েছে বাড়ির সামনের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ফাঁকা উঠোনে। লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ের মাঝেই পুলিশের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে কর্তাব্যক্তিরা। পুলিশ তখন নেতা-মন্ত্রীদের সামলাবেন না সাধারণ মানুষকে।

শুভেন্দু অধিকারী-সহ জেলার শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা তখন মৃতদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। বুধবার গ্রামে দেখা যায়নি পুলিশ ছাড়া কোনও প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে দল বেঁধে গ্রামে এসেছেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, এসডিও, বিডিও সকলকেই।

বেলা ১টা থেকেই প্রস্তুতি চলেছে জানাজা’র। পাঁচটি দেহই নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গ্রামের কবরস্থানে। প্রতিটি দেহের পিছনে তখন চলেছে পিল পিল করে হাজারও মানুষের ঢল। সবাই চায় শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে কবরে মাটি দিতে। শেখদিঘি, ফুলশহরি, ফুলবাড়ি, মোরগ্রাম, বোখারা-সহ আশপাশের গ্রামই নয়, সাগরদিঘি, শেখপাড়া, রতনপুরের মতো দূরের গ্রাম থেকেও উজাড় করে মানুষ এসেছেন বাহালনগরে। সব গ্রাম যেন শেষ যাত্রায় হয়ে উঠেছে এক বৃহত্তর বাহালনগর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement