নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে। ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জড়িত নতুন নতুন নাম— গ্রেফতারির পর থেকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে একের পর এক ‘বোমা’ ফাটিয়েছেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। যখনই তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, বা আদালত থেকে বার করে আনা হয়, সাংবাদিকেরা কুন্তলকে ঘিরে ধরেন। তিনিও কিছু না কিছু বলে থাকেন। একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ হুগলির এই বহিষ্কৃত নেতার মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার আদালতে যেন অন্য কুন্তলকে দেখা গেল। সাংবাদিকদের দিক থেকে একের পর এক প্রশ্নবাণ ধেয়ে এল ঠিকই, কিন্তু বরাবরের মতো মুখ খুললেন না তিনি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ কলকাতার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয় কুন্তলকে। গাড়ি থেকে নামার পর সাংবাদিকেরা তাঁকে দু’টি প্রশ্ন করেছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে তলব করা হয়েছিল। তাঁকে ভর্ৎসনাও করে আদালত। সেই প্রসঙ্গে কুন্তলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কুন্তল কোনও উত্তর দেননি।
এর পর সাংবাদিকেরা অন্য প্রশ্ন করেন কুন্তলকে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত আর এক নেতা তাপস মণ্ডল কুন্তলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে কুন্তলকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনি কি ৫০০ কোটি নিয়েছেন?’’
এই প্রশ্নের উত্তরেও চেনা কুন্তলকে দেখা যায়নি। তিনি কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই নীরব থেকেছেন। আদালতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ঢুকে যান লকআপে।
আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কিছু দিন আগেই কুন্তলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন তাপস। তিনি দাবি করেছিলেন যে, তিনি শুনেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন কুন্তল। আর সেই সব টাকাই তিনি হাওয়ালাতে খাটাচ্ছেন। তাপস বলেছিলেন, ‘‘প্রথম দিনে বলেছি ১০০ কোটির খেলা। এখন যেটা শুনছি ৫০০ কোটির খেলা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে ও যত টাকা তুলেছে, তা হাওয়ালাতে খাটাচ্ছে। ও তো বলছে ইডি-সিবিআই টিকিও পাবে না।’’
তাপসের অভিযোগ প্রসঙ্গে কুন্তল অবশ্য এর আগে মুখ খুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওর (তাপস) মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ভুলভাল বকছে।’’ তবে বৃহস্পতিবার তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করলেন না।
এর আগে কুন্তল কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিলেন, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ জানিয়ে বিচারককে তিনি চিঠিও দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে কুন্তল যেখানে আছেন, সেখানেই রাখা হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকেও। তাঁর হাতের আংটি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জেলে থেকেও পার্থ নিয়ম ভেঙে অলঙ্কার পরেছেন বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গে কুন্তল কটাক্ষ করে হাত তুলে দেখিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর হাতে আংটি নেই, ঘামাচি আছে। জেল সুপারকে সেই সূত্রেই তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সুপারকে ভর্ৎসনার প্রশ্ন শুনেও নীরবই রইলেন কুন্তল।