ফাইল চিত্র।
তাঁর টাকা নেই, মন্তব্য করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তা হলে অর্পিতার বাড়িতে উদ্ধার হওয়া টাকা কার? কী ইঙ্গিত পার্থর? প্রশ্ন শুনেই তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তাঁর টাকা নেই, এ কথা এত দিন বলেননি কেন পার্থ?’’ শান্তিনিকেতনের ‘অপা’ নামের বাড়ি নিয়েও পার্থকে কটাক্ষ করলেন কুণাল।
পার্থকে বিঁধে কুণাল বলেছেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে দলের একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রথম যখন সুযোগ পেলেন, তখন চক্রান্ত, নির্দোষ বললেন না। হঠাৎ গত দু’দিন ধরে তিনি চক্রান্ত, আমার টাকা নয়— এ সব বলছেন। যেখানে দলের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে, সেখানে পার্থদা কবে কী বলছেন, সে নিয়ে বলব না কিছু। কখনও হয়তো বলবেন আমি পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি না নিজেই জানি না। বলবেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে চিনি না। ওঁর যা বক্তব্য আদালতে বলুন। টাকা উদ্ধার হচ্ছে, অপার ছবি, আঙুলের ছাপ, দলিল বেরোচ্ছে, দুনিয়ার জিনিস বেরোচ্ছে। উনি প্রথম দিন কেন বলেননি?’’
স্কুলের চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে পার্থর গ্রেফতারি ও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে একের পর এক টাকা উদ্ধারের ঘটনায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরব হয়েছিলেন কুণাল। পার্থকে অবিলম্বে মন্ত্রিত্ব ও দলের সমস্ত পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছিলেন। বস্তুত, তাঁকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে টুইট করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেদিনই পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে পার্থকে সাসপেন্ড করা হয় ও দলের সমস্ত পদ থেকে অপসারিত করা হয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, পার্থকে দল থেকে ছেঁটে ফেলে দায় এড়াচ্ছে তৃণমূল। পার্থর ‘টাকা নেই’ মন্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধীদের একাংশের কটাক্ষ, তা হলে এই টাকা কি দলের! রবিবার বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘অর্পিতা বলছেন, তাঁর কোনও টাকা নেই। পার্থবাবুও বলছেন, তাঁর কোনও টাকা নেই। তা হলে টাকাটা কার? রাখল কে? কোথা থেকে এল? এত পরিমাণে টাকা একদিনে নিশ্চয়ই আসেনি। রাখতে সময় লেগেছে। সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকেই টাকা তোলা হয়েছে, আমরা এটা জানি। বিরাট নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। এক-দু’জনের কাজ নয়। অনেক লোক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। উপরমহল যুক্ত রয়েছে। কখন সত্যিটা সামনে আসবে, মানুষ অপেক্ষা করছে।’’ যদিও কুণালের দাবি, ‘‘এ সবের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব রচনা হওয়ার পরই জোকার হাসপাতালে ঢোকার মুখে গত শুক্রবার পার্থ বলেন, ‘‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’’ কিন্তু কে ষড়যন্ত্র করেছেন? কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন? এ নিয়ে অবশ্য খোলসা করেননি পার্থ। ফলে তাঁর এই ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’ নিয়ে জল্পনা চলে রাজ্য রাজনীতিতে। সেদিনের পর রবিবারও ষড়যন্ত্র নিয়ে যে ভাবে সরব হলেন ইডির হেফাজতে থাকা পার্থ, তা এই পর্বে নয়া মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ‘আমার কোনও টাকা নেই’ বলে যে দাবি করলেন পার্থ, তা তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, ওই টাকা পার্থর বলে জেরায় দাবি করেছেন অর্পিতা ।
কুণালের মতোই পার্থর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। পার্থর মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পার্থর কোনও বক্তব্যকেই আমরা সিরিয়াসলি নিচ্ছি না। ওঁর একার কাজের ফলে দল বদনাম হয়েছে। তাই ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া ওঁর এখন যা বলার আছে কোর্টে বলুক। উনি এখন ইডির হেফাজতে রয়েছেন। তাই ওঁর কথার কোনও মূল্য নেই। আইন বলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তির কোনও বক্তব্যের কোনও মূল্য থাকে না।’’