(বাঁ দিকে) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যেই বুদ্ধদেব সম্পর্কে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কিছু মন্তব্য বিতর্কের উদ্রেক করেছিল। গত বুধবার বুদ্ধদেব হাসপাতাল থেকে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরেছেন। শুক্রবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করে দূত মারফত তাঁর বাড়িতে ফুল এবং বই পাঠালেন কুণাল।
বুদ্ধদেবের বাড়িতে বিশেষ দূত মারফত লাল গোলাপের তোড়া এবং নিজের লেখা দু’টি বই পাঠিয়েছেন কুণাল। বুদ্ধদেব বরাবরই রবীন্দ্রপ্রেমী। রবীন্দ্রসঙ্গীত যে তাঁর প্রিয়, তা-ও সর্বজনবিদিত। সেই কারণেই শুক্রবার সঙ্গীতশিল্পী মোহন সিংহ খাঙ্গুরার একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবামও উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। বুদ্ধদেব-জায়া মীরা তা গ্রহণও করেছেন। পরে কুণাল বলেন, ‘‘বুদ্ধবাবুর রাজনীতি নিয়ে আমার সমালোচনা ছিল, আছে এবং থাকবে। তা আমি করি এবং ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু সাংবাদিক কুণালকে উনি কোনও দিন খালি হাতে ফেরাননি। ওঁকে মিস্ করি। ওঁকে অসুস্থ দেখতে ভাল লাগে না।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘এই একই কথা আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার সময় আমি মীরা ভট্টাচার্যকেও বলেছিলাম।’’
বুদ্ধদেব এই দফায় যে দিন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, সেই রাতেই তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বুদ্ধবাবুর রাজনীতির সঙ্গে আমাদের আদর্শগত ফারাক রয়েছে। কিন্তু এই মানুষটাকে কেউ কখনও চোর বলতে পারবে না।’’ পরের দিনই আসরে নামেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দ্রুত আরোগ্য কামনা আমিও করছি। কিন্তু কেউ কেউ তাঁকে মহাপুরুষ সাজানোর চেষ্টা করছেন।’’ কুণাল মনে করিয়ে দেন, বুদ্ধদেবের আমলেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নন্দীগ্রামে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নেতাইয়ের গণহত্যা এবং সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ তোলেন কুণাল। তার প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন ওঠে, বুদ্ধদেব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে ওই কথা বলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। শিষ্টাচারের প্রশ্নও ওঠে।
সেই সব বিতর্ক এখন স্তিমিত। ১১ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বুদ্ধদেব বাড়ি ফিরেছেন। আপাতত তিনি বাড়িতেই হোম কেয়ারে রয়েছেন। শুক্রবার কুণালের দূত যান ৫৯, পাম অ্যাভিনিউয়ের একতলার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে লাল গোলাপের ফুলের তোড়া, কুণালের লেখা বই এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম। কুণাল পরে জানান, বুদ্ধজায়া মীরা তাঁর দূতের মাধ্যমে তাঁর এবং বুদ্ধদেবের তরফে কুণালকে শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন।