যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রকে আটক করল পুলিশ। সৌরভ চৌধুরী নামে ওই প্রাক্তন ছাত্রের কথা এফআইআরে জানিয়েছিলেন যাদবপুরের মৃত ছাত্রের বাবা। তিনিই বলেছিলেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে আমার বড় ছেলের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। ওঁরাই আমার ছেলেকে নীচে ফেলে মেরে দিয়েছে।’’ এই অভিযোগের পরই শুক্রবার সন্ধ্যায় আটক করা হয় সৌরভকে। এই প্রথম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে আটক করল পুলিশ।
বুধবার রাতে স্বপ্নদীপ কুণ্ডু নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে মেন হোস্টেলের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় যাদবপুরের হস্টেল আটকে পড়ে থাকা প্রাক্তনীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল স্বপ্নদীপের পরিবার। স্বপ্নদীপের বাবা বলেছিলেন, তাঁর ছেলে প্রথমে হস্টেলে থাকার সুযোগই পায়নি। এই সৌরভ ছিলেন মেস কমিটির অন্যতম। সেই হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। শুক্রবার এই সৌরভকেই আটক করেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) জানিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্রকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্বপ্নদীপের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সৌরভের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ। ২০২২ সালে এমএসসি পাশ করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এই সৌরভের বাড়ি চন্দ্রকোনায়। স্বপ্নদীপের বাবাকে এই সৌরভই জানিয়েছিলেন, হস্টেলে গেস্ট হয়ে থাকা যায়। বস্তুত তাঁর কথাতেই বিশ্বাস করে ছেলে স্বপ্নদীপের জন্য এক পড়ুয়ার ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা। যাদবপুরের মেন হস্টেলে মনোতোষ নামে এক ছাত্রের ১০৪ নম্বর রুমে সৌরভই রাখার ব্যবস্থা করে স্বপ্নদীপকে। ওই ঘরে স্বপ্নদীপের রুমমেট ছিলেন কল্লোল ঘোষ নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌরভকে আটক করে জেরা করার পাশাপাশি পুলিশ আরও অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রয়। হস্টেল সুপার তপন কুমার জানা, বাংলা বিভাগের প্রধান জয়দীপ ঘোষ এবং ডিন অফ সায়েন্স তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যলয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবারই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত জানিয়েছিলেন, বুধবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে এক পড়ুয়ার কাছ থেকে ফোনে তিনি শুনেছিলেন, এক ছাত্রের ‘পলিটিসাইজ়েশন’ হয়েছে। ‘পলিটিসাইজ়েশন’ শব্দের মর্মার্থ স্পষ্ট হয়নি তখন রজতের। পড়ুয়ার কাছে শব্দের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ওই পড়ুয়া জানান যে, এক ছাত্রকে ক্যাম্পাসে বলা হয়েছে হস্টেলে না থাকতে। কারণ, সেখান থেকে নাকি দোতলা, তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিতে হয়। রজতের সেই কথা প্রকাশ্যে আসার পর স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা আরও ঘনায়। এর পরেই সন্ধ্যায় আটক করা হয় ওই ছাত্রকে।
এ দিকে, যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার প্রভাব পড়েছে বাংলার রাজনীতিতেও। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর জন্য সরাসরি রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোসকে দায়ী করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সুকান্ত টুইটে লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার র্যাগিংয়ের মতো অপরাধ রুখতে পারেননি। রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানাই।’’ পাল্টা ব্রাত্য লিখেছেন, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি সরকারকে দায়ী করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এটা তাঁর ব্যর্থতা।’’ এর পরে বিকেল ৪টে নাগাদ যাদবপুর থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন বিজেপির সদস্যরা। রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে ওই বিক্ষোভ কুশপুতুল দাহ করা হয়। বিজেপির বিক্ষোভের জেরে থমকে যায় আনোয়ার শাহ রোড-সহ যাদবপুর থানা সংলগ্ন বেশ কিছু রাস্তা।