তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
জেলে যখন তাঁর বিরুদ্ধে প্রচুর ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল, সেই সময় তিনি ছিলেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কট্টর বিরোধী। এখন তিনি সেই দলেরই সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র। বন্দিদশায় আত্মহত্যার মামলায় আদালত ডেকে পাঠানোয় কুণাল ঘোষ যারপরনাই আতান্তরে।
সমস্যা কিসের? সাক্ষীদের একাংশ জানিয়েছেন, জেলে থাকাকালীন কুণাল ঘুমের ওষুধ খাননি। আর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর পেটে ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনাটি যখনকার, সেই সময় শাসক-বিরোধী শিবিরে থাকা কুণালকে তৃণমূলের সরকারের পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হতে হয়েছিল। আর এখন তিনি সেই শাসক দলেরই অন্যতম নেতা। সেই মামলার সাক্ষীদেরও সকলে সরকারি কর্মী বা অফিসার। এখন তিনি যদি বলেন যে, ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন, বিপদে পড়বেন জেলের কর্মী-অফিসারেরা। খাননি, এটা বলাও মুশকিল। কারণ, মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, তাঁর পেটে ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল। সে-ক্ষেত্রে জেলের খাবারের সঙ্গে তাঁকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই অভিযোগ, সন্দেহ আর প্রশ্ন বড় হয়ে উঠবে। তাতেও সমস্যায় পড়বেন জেলের কর্মী ও অফিসারেরা।
২০১৪ সালে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় জেলে ছিলেন কুণাল। সারদায় অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে প্রতিদিন তখন তিনি নাগাড়ে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। অন্যদের গ্রেফতারের দাবিতেই তাঁর বিরুদ্ধে ১৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্সি জেলে একসঙ্গে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার অনতি পরে সারদা মামলায় তৃণমূল সরকারের তখনকার মন্ত্রী মদন মিত্র এবং শিল্পপতি সৃঞ্জয় বসুকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
ঘুমের বড়ি খাওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে কুণালকে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেই ঘটনা নিয়ে মামলা হয় এবং এখনও তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সল্টলেকে সাংসদ-বিধায়কদের মামলার জন্য নির্দিষ্ট আদালতে এ-যাবৎ ওই ঘটনায় ১৩ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। আর তার পরেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। জেলের কর্মী-অফিসারেরা ছিলেন সেই ঘটনার মূল সাক্ষী। আদালত সূত্রের খবর, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, অত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, জেলে অত ঘুমের ওষুধ পাওয়ার কথা নয় কুণালের। সেই সময় জেলের দায়িত্বে থাকা অফিসারের আদালতে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী রাতে একটি মাত্র ঘুমের ওষুধ খেতেন কুণাল। ওষুধ তাঁর কাছে থাকত না। জেলকর্মীদের সামনেই তাঁকে সেই ওষুধ দেওয়া হত।
কিন্তু সেই সময় কুণালের শারীরিক পরীক্ষার পরে চিকিৎসক ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, তাঁর পেটের ভিতরে প্রচুর ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে। কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই অবস্থায় আমার মক্কেলকে ১১ এপ্রিল আদালতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বিচারক নিজে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। কোনও সাক্ষীই বলেননি যে, কুণাল নিজে ওষুধ খেয়েছিলেন। কেউ তাঁকে ওষুধ খেতে দেখেছেন, এমনটাও নয়।’’
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুণালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দেখাই যাক, কী হয়। আইন আইনের পথে চলবে।’’