তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র ।
তাঁর শূন্যপদে বসানো হোক ভোটে তৃণমূলের রণকৌশল নির্ধারক সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর বর্তমান প্রধান পরামর্শদাতা প্রতীক জৈনকে। দলের কাছে এমনই ‘আর্জি’ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। বুধবার শাস্তি ঘোষণার পরেও কুণাল দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগা জারি রেখেছেন। নাম না করেও প্রকাশ্যে দলের ‘তারকা’ নেতা-মন্ত্রীদের বিঁধছেন। এ বার তিনি মুখ খুললেন আইপ্যাক এবং প্রতীককে নিয়ে। তাঁর দাবি, তৃণমূল দল ‘চালাচ্ছেন’ ভোটকুশলী প্রতীক এবং তাঁর সহকর্মীরা। এবং তার জন্য তাঁদের দলের পদ এবং প্রতীকও প্রাপ্য। শুক্রবার সকাল সকাল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে কুণাল এই কথা জানিয়েছেন। যা থেকে স্পষ্ট, তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরই লাইন নিয়েছেন।
ওই কথা বলতে গিয়ে নিজেকে ‘অপদার্থ’ এবং ‘দলবিরোধী’ বলেও অভিহিত করেছেন কুণাল। তিনি লিখেছেন, ‘‘সমর্থক হিসেবে দলকে আমার সবিনয় অনুরোধ, ‘অপদার্থ’ ও ‘দলবিরোধী’ কুণাল ঘোষের শূন্যপদে মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আইপ্যাকের প্রতীক জৈনকে নিয়োগ করা হোক। দলটা ওরা এত ভাল ভাবে চালাচ্ছে যে, সাংগঠনিক পদও প্রতীকের প্রাপ্য। দলের মঙ্গল হোক।’’
তবে এটা স্পষ্ট যে, আইপ্যাক কর্তা প্রতীককে তাঁর পদে বসাতে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশকেই বিঁধেছেন ‘ঠোঁটকাটা’ কুণাল। দলের অন্দরে অনেকে এমনও মনে করছেন যে, তাঁর এই বার্তা আদতে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কটাক্ষ। অভিষেকই তৃণমূলের রণকৌশল ঠিক করতে ২০১৯ সালের ভোটের পরে আইপ্যাককে এই রাজ্যে এনেছিলেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ভোটকুশলী’ প্রশান্ত কিশোরকেও পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসেন অভিষেক। অভিষেক-পিকে জুটিই ছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পর্দার পিছনে তৃণমূলের অন্যতম চালিকাশক্তি। সে জুটির সাফল্য এখন ইতিহাস।
তবে তৃণমূলের অন্দরে একটি অংশ ‘আইপ্যাক’কে দিয়ে দলের রণকৌশল ঠিক করানোর পক্ষপাতী ছিল না। কুণালও সেই দলে ছিলেন বলে জল্পনা ছিল। যদিও এ নিয়ে কোনও দিন প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি কুণালকে। তবে অতীতে আইপ্যাকের প্রাক্তন প্রধান পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরকে নিশানা করেছিলেন তিনি। তাই অনেকে মনে করছেন, প্রতীককে তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ করার কথা বলে প্রকারান্তরে অভিষেককেই খোঁচা দিয়েছেন তিনি। খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলে আইপ্যাকের ‘বর্ধিত’ প্রভাবকেও। আবার দলের অন্দরে অনেকে এমনও বলছেন যে, পদ খোয়ানোর পরেই এই মন্তব্য করছেন কুণাল। কেন তিনি এ নিয়ে আগে কেন মুখ খোলেননি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় কুণালকে। এর পর বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পঞ্চম দফার তারকা প্রচারকদের নামের তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুণাল। দলীয় সূত্রের দাবি, কুণালকে দলীয় পদ থেকে এবং তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে অপসারণে সায় ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের। বুধবার পদ থেকে অপসারণের পর থেকে কুণাল যে ভাবে দলের একাংশকে আক্রমণ করেছেন, তা-ও ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের আবহে কুণালের এই কাজকর্ম দলের কাছে ‘বিড়ম্বনাজনক’। প্রসঙ্গত, বুধে দলীয় পদ খোয়ানোর পরে বৃহস্পতিবারই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘পারফরম্যান্স’-এর প্রশংসা করেছেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু যা করছেন, তা প্রশংসার যোগ্য এবং শিক্ষণীয়। এ বার এক ধাপ এগিয়ে ‘আইপ্যাক’ এবং সংস্থার প্রধান প্রতীক জড়িয়ে দলকে খোঁচা দিলেন কুণাল। এখন দেখার, দল এর প্রেক্ষিতে কী করে। কুণালের বিরুদ্ধে আরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? না কি তাঁর ঘন ঘন তোপ দাগা উপেক্ষা করা হবে?