প্রসঙ্গত, ১ মার্চ শিবরাত্রীর দিন কোন্নগরের চটকল এলাকায় একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ধর্ষণের ভিডিয়ো ভাইরাল করানোর দেখিয়ে ওই তরুণীকে আবারও গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ চার যুবকের বিরুদ্ধে।
উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে অভিযুক্ত পি শিবা রাওয়ের এই নিজস্বীই ভাইরাল হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
ছবি ১: উত্তরপা়ড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে নিজস্বী তুলছেন কোন্নগর গণধর্ষণ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত পি শিবা রাও। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েক জন যুবক।
ছবি ২: তৃণমূলের পতাকা হাতে কোন্নগর গণধর্ষণ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত পি শিবা রাও। সে নিজস্বীতেও তাঁকে ঘিরে কয়েক জন। সকলেরই মুখই সবুজ আবিরে রাঙানো।
হুগলির কোন্নগরে গণধর্ষণের অন্যতম অভিযুক্তের এই দুই ভাইরাল ছবি ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে শাসকদল। বৃহস্পতিবার দলের প্রাক্তন পুর প্রশাসকের পর এ বার অভিযুক্তের সঙ্গে ছবিতে খোদ বিধায়ক। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাম এবং বিজেপি। দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার শহর জুড়ে পোস্টার পড়েছে বামদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের তরফে। অন্য দিকে, গণধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ বিজেপির। সে কারণেই এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও দাবি তাদের। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে একে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা বলে পাল্টা দাবি তৃণমূলের।
শাসকদলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক এবং উত্তরপাড়া পুরসভার প্রধান দিলীপ যাদবের দাবি, ‘‘দু’টি ভাইরাল ছবিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এবং বিজেপি। তাঁদেরকে বলি যে আমার দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে যদি (অভিযুক্তের) ছবিও থাকে, তবে সেই মানুষটির কাজই বিবেচ্য বিষয়। অপরাধমূলক কাজ হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। আমাদের দলের কেউ অপরাধ বা অপরাধীর পক্ষে নেই। আইন আইনের পথে চলবে। বিচারব্যবস্থা যা বলবে, সেটাই হবে।’’
প্রসঙ্গত, ১ মার্চ শিবরাত্রীর দিন কোন্নগরের চটকল এলাকায় একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ধর্ষণের ভিডিয়ো ভাইরাল করানোর দেখিয়ে ওই তরুণীকে আবারও গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ চার যুবকের বিরুদ্ধে। এর পর ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পি শিবা রাও, ভি হরিশ, বি বিবেক এবং আকাশ জানা নামে এলাকার চার যুবককে আটক করেছে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতারির পর শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়।
কোন্নগরের প্রাক্তন পুর প্রশাসক তথা বর্তমান চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তন্ময় দেবের সঙ্গেও শিবার ছবি দেখা গিয়েছিল। যদিও তন্ময়ের দাবি, ‘‘আমরা রাজনীতি করি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। সে পরে গিয়ে কী অপরাধ করবে, কী করে জানব? আর ছবি দিয়ে কিছু হয় না। তা হলে তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি রয়েছে এমন ব্যক্তি ব্যাঙ্ক লুট করে পালিয়ে গেল। রাজ্যপালের সঙ্গে এমন সব লোকের ছবি রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ আছে। এ ধরনের ছবির রাজনীতিতে মূল্যহীন। মানুষের তৃণমূলের উপর আস্থা রয়েছে।’’ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন ওই তৃণমূল নেতা।
দিলীপের আরও দাবি, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনের প্রচার করে বিভিন্ন দল। কোন মানুষের সঙ্গে কোথায় ছবি তুলেছেন, তার থেকেও বেশি জরুরি কারা কী অপরাধ করেছেন। এক জনের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর ছবি আমাদের বিধায়ক এবং প্রাক্তন পুরপ্রধানের সঙ্গে রয়েছে। রাজনীতি করার জন্য এগুলি বলা যায়। তবে এ ধরনের অন্যায় কার্যকলাপ হয়ে থাকলে তা সমর্থন করেন না তাঁরা।’’