নিকাশি সংস্কারে ফের পাইপ বসানো শুরু

রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে নিকাশি পরিকাঠামো উন্নয়নে গ্লাস রিইনফোর্সড প্লাস্টিক বা জিআরপি পাইপ বসানোর কাজ ফের শুরু হচ্ছে। যে সংস্থা ওই কাজটির বরাত পেয়েছিল, তারা দেউলিয়া হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বছরখানেক আগে। স্বভাবতই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার একটা অংশ এত কাল কার্যত ‘ব্লক’ হয়েই রয়েছে। ভুগতে হয়েছে ওই রাস্তায় চলাচল করা গাড়ি ও যাত্রীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে নিকাশি পরিকাঠামো উন্নয়নে গ্লাস রিইনফোর্সড প্লাস্টিক বা জিআরপি পাইপ বসানোর কাজ ফের শুরু হচ্ছে। যে সংস্থা ওই কাজটির বরাত পেয়েছিল, তারা দেউলিয়া হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বছরখানেক আগে। স্বভাবতই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার একটা অংশ এত কাল কার্যত ‘ব্লক’ হয়েই রয়েছে। ভুগতে হয়েছে ওই রাস্তায় চলাচল করা গাড়ি ও যাত্রীদের। এ বার কাজটি শুরু হওয়ার কিছুটা স্বস্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে ওই কাজের বরাত পায় অস্ট্রিয়ার এক সংস্থা। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.৮৭ কিমি রাস্তার নীচে জিআরপি পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়। ৫০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর হঠাৎই কাজ বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। পরে অস্ট্রিয়া থেকে খবর আসে ওই সংস্থা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, সেই খবর পেয়েও তা পুরকর্তাদের জানাননি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। উল্টে অন্য এক সংস্থাকে বাকি কাজের বরাত দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।

কাজটিতে অনিয়ম নিয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের ওই অফিসারের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ তোলেন একাধিক পুরকর্তা। ব্যাপারটি মেয়র পরিষদের বৈঠক পর্যন্ত গড়ায়। টেন্ডার এড়িয়ে বিশেষ এক সংস্থাকে বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বরত চিফ ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একাধিক মেয়র পারিষদ। পরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ মতো নতুন করে টেন্ডার ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় পুর প্রশাসন।

Advertisement

গত সেপ্টেম্বরে বাকি কাজের জন্য ফের টেন্ডার ডাকে পুর প্রশাসন। তাতে গুড়গাঁওয়ের একটি সংস্থা বরাত পায়। পুরসভা সূত্রের খবর, বাকি ১.৮৪ কিলোমিটারের কাজ বাকি। তার জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থাকে। তাতে শর্ত দেওয়া হয়েছে, এক বছরে কাজ শেষ করতে হবে।

শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম রাস্তা রাসবিহারী অ্যাভিনিউ। ওই রাস্তার উপরেই গড়িয়াহাটের মতো জনবহুল স্থান। তার কাছেই মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই দশা থেকেই গিয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ওই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে যায় যানবাহনের গতি।

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা মূলত ইটের কাঠামোর উপর নির্ভরশীল ছিল। ওই কাঠামো বহু জায়গায় ভেঙেচুরে যাওয়ায় গতিরুদ্ধ হচ্ছিল নিকাশি ব্যবস্থার। তার জেরে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমতো ফি বছর। বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো যান চলাচল। তাই নিকাশির উন্নয়নে পুরনো কাঠামো সারিয়ে তার ভিতর দিয়ে জিআরপি পাইপ বসানোর উদ্যোগ নেয় পুর প্রশাসন। বছর কয়েক আগেই শুরু হয় সেই প্রক্রিয়া। বাম আমলে ওই ধরনের পাইপ বসানো শুরু হলেও তার গুণমান নিয়ে সরব হয় তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল। ক্ষমতায় এসে অবশ্য তৃণমূল বোর্ড অবশ্য নিকাশির উন্নয়নে জিআরপি পাইপ বসানোয় জোর দেয়। উত্তর ও মধ্য কলকাতার বেশ কিছু এলাকা সহ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, হাজরা রোড সহ আরও কয়েকটি রাস্তায় ওই পাইপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “জিআরপি পাইপের মধ্যে দিয়ে নিকাশির বর্জ্য তরল সহজেই প্রবাহিত হয়। নিকাশির উন্নয়নে বিশ্বে ওই ধরনের পাইপের ব্যবহার বাড়ছে।” পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, ইতিমধ্যেই ওই ধরনের পাইপের ব্যবহারে সুফল মিলেছে। তিনি বলেন, “আগে শহরে জমা জল সরতে বেশ কয়েক দিন লেগে যেত। এখন বৃষ্টি হলে বেশিক্ষণ জল জমে থাকে না।” গত বর্ষাতেও তার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি পুরকর্তাদের। এ ঘটনা যে সত্য তা মেনে নিয়েছেন শাসক-বিরোধী দু’দলেরই কাউন্সিলরেরা। আপাতত, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের কাজ কবে শেষ হবে তার দিকে নজর সকলেরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement