‘সংস্কারোঁ কো দিমাগ মে বিঠাকে/অলোকনাথ কে জ্যায়সা তিলক লাগাকে/প্রসাদ মে নারিয়েল মিলাকে/আ যাও সারে মুড বনাকে’!
চাপ হচ্ছে বুঝি? থালাইভা ভার্সেস বাবুজির লড়াই শুরু হয়ে গেছে, আপনি আর চাপ নিয়ে কী করবেন! বরং প্রাণ খুলে হাসুন। না-ও হাসতে পারেন, যেমন আপনার মর্জি! তবে রজনীকান্ত কিন্তু মোটেই হাসছেন না। তাঁর ফ্যান-ফলোয়িংয়ের রংতামাশার বাজার কালে দিনে অলোকনাথ থুড়ি বাবুজি খেয়ে ফেলেছেন যে! আনস্মার্ট থেকে স্মার্টফোন, ট্যাব থেকে ক্যাব- সবেতেই এখন জোর চর্চা চলছে অলোকনাথ-মেমে নিয়ে!
সেই অলোকনাথ, যিনি জন্মাতে না জন্মাতেই নার্স এসে বলেছিলেন, ‘বাধাই হো, বাবুজি পয়দা হুয়ে হ্যায়’! সেই অলোকনাথ যিনি ‘আশীর্বাদ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’-এ বিশ্বাসী! বড়-ছোট পর্দার কন্যাদায়গ্রস্থ, আশীর্বাদ বিলোনো, সংস্কারী অলোকনাথ-মেমেই এখন চলতি হাওয়ায় হটকেক। ট্যুইটারে আছড়ে পড়ছে অলোকনাথ-মেমের পাগলা তুফান, নিরামিষ থেকে আমিষ- সব রকমের ঠাট্টাতামাশা রোজ আপডেট হচ্ছে অলোকনাথকে নিয়ে। তার জেরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে আপাতত ধুলোয় মিশে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে রজনীকান্ত-মেমে।
অবশ্য শুধুই রজনীকান্ত নয়। অলোকনাথ এখন বেশ এক-দু’ হাত নিচ্ছেন সব হিরোদেরই। সলমন খানের এই ৪৮ বছর বয়স পর্যন্ত ভার্জিন থাকাটা যেমন অলোকনাথের ‘সংস্কার’-এর ফলাফল! শাহরুখ খানের বিখ্যাত করে ফেলা ‘রাহুল’ নামটাও বাদ যাচ্ছে না এই আওতায়। ‘রাহুল নাম তো শুনা হি হোগা’-র মতো অলোকনাথের পেটেন্ট এখন ‘আশীর্বাদ তো লিয়া হি হোগা’। বাবুজির ফেভারিট ড্রিঙ্ক? ‘গঙ্গাজল’! পাসটাইম? ‘উই ডু আরতি অল নাইট’!
এমন আরও আছে। বাবুজির ‘সংস্কার’ থেকে বাদ যাচ্ছে না সামাজিক সমস্যাও। গে-ম্যারেজ ব্যাপারটাকেই যেমন খুবই স্বাগত জানিয়েছেন বাবুজি। একই সঙ্গে জোড়া কন্যাদান আর জোড়া জামাই মিলছে বলে! আস্তে আস্তে বোধহয় ব্যাপারটা যাচ্ছে স্পর্শকাতরতার দিকেও। এই তো সম্প্রতি আদালতের রোষে পড়ল বাবুজি ভার্সেস সিআইডি জোক। কিন্তু হুজুগ বাড়ছেই। এ অলোকনাথ-মেমে তরঙ্গ রোধিবে কে? চান বা না-ই চান, দিনে একটা বাবুজি জোক তাই চলতি হাওয়ায় শুনতেই হচ্ছে।
কারা শোনাচ্ছে এই বাবুজি-মেমে? জেন-ওয়াই? আদপেই সংস্কারী নয়, বেলেল্লাপনার ডিপো- এইসব বলে তো আঙুল তোলা হয় তাদের দিকেই। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় যে তাদের মাথা থেকে বেরিয়ে তারপর হাতে হাতে আর মুখে মুখে ঘুরছে অলোকনাথ-মেমে?
মুশকিল হল, জেন-ওয়াইয়ের অনেকেই কিন্তু অলোকনাথকে চেনেই না। অন্তত হেপ বলে খ্যাতি যাদের, তাদের দশজনের মধ্যে নয়জনই নয়। কী করেই বা চিনবে! তারা যেরকম ছবি দেখে, তাতে অলোকনাথের টিপিক্যাল বাবুজি ফিগারের কোনও জায়গা নেই। সেন্ট জেভিয়ার্সের ফার্স্ট ইয়ারের অনন্যা মিত্র যেমন চোখ কপালে তুলে ফেলল অলোকনাথ-মেমের কথা শুনে! ‘দিনে বেশ কয়েকবার করে নানান বন্ধুবান্ধব অলোকনাথ-মেমে ফরওয়ার্ড করে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমি না অলোকনাথকে ঠিক চিনি না। কোনও দিন ওঁর অভিনয়ও দেখিনি! তাই খুব একটা মজা পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে তো বেশ বোকা বোকাই লাগছে’! অকপটে অলোকনাথ-মেমে নিয়ে মনের কথা বলে ফেলল সামপ্লেস এলস্-এ ঠেক জমানো এই মেয়ে!
এই দলের বাইরে আছে দুটো শ্রেণি। অলোকনাথকে চেনে- এমন দুটো দল। এই দুই দলের মধ্যে এক পক্ষ বেশ হাহা-হিহি করছে বাবুজি-মেমে নিয়ে। তারা যে সবাই জেন-ওয়াই, এমনটা কিন্তু নয়। এই যেমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ রুদ্র! ‘একটা সময়ের পর থেকে পর্দায় অলোকনাথের টাইপকাস্ট দেখে দেখে চোখ পচে গেছে! সেই এক কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা, আর নতুন প্রজন্মের সঙ্গে লড়াইয়ে ট্র্যাডিশনের জয়ঢাক পেটানো! কতদিন আর মানুষ এসব নেবে বলুন তো? সময় তো পাল্টাচ্ছে। তাই সারা দিনে এক-আধটা বাবুজি-মেমে দেখলে ভালই লাগছে। অন্তত মানুষটার খ্যাতিতে একটা চেঞ্জ তো এল! কে না জানে, বিখ্যাত মানুষদের নিয়েই সবচেয়ে বেশি রসিকতা হয়’? পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সন্দীপ।
অন্য দল কিন্তু এসবের মোটেই সমর্থন করছে না। তারা বাবুজির মতোই ‘সংস্কারী’ এবং অন্যকে নিয়ে রাত-দিন এমন রংতামাশা তাদের কাছে প্রায় ব্যভিচারের মতোই। ‘কেন এমনটা হবে বলুন, তো? এই দেশটা কি নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন-এর মতো হয়ে যাচ্ছে নাকি? আরে, এখনও বাবুজির মতো মানুষ আছেন বলেই ভারতীয় পরিবারগুলো টিঁকে আছে, নইলে কবে সামাজিক গঠনটা ভেঙে পড়ত! আর কন্যাদান? ছিঃ! এটা এখনও ভারতের একটা নির্মম সমস্যা। এমন স্পর্শকাতর ব্যাপার নিয়ে যারা হাসিঠাট্টা করেন, তাদের আমার কিছুই বলার নেই’, রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন সোশ্যালিস্ট শাঁওলি তরফদার অলোকনাথ-মেমের কথা উঠতেই!
কী কান্ড! পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, অলোকনাথ কিন্তু রাজ করেই চলেছেন চলতি হাওয়ায়। শাঁওলির মতো ব্যাপারটা নিয়ে উত্তেজিত তাঁর পরিবারও। কিন্তু বাবুজি রয়েছেন তাঁর সদা হাস্যময় মেজাজেই। একটা জায়গাতেই কেবল নিয়ম ভেঙেছে। ‘এইসব জোকগুলোকে আমি এক চিমটে নুন আর এক শট ভদকা দিয়ে গিলে ফেলছি’! হাসতে হাসতে বিবৃতি দিয়েছেন অলোকনাথ।
অলোকনাথ? আজ্ঞে হ্যাঁ, তিনি-ই। ‘আরে, একটা সময়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আমি চুটিয়ে মালের পার্টি করেছি। সেইসব পার্টিতে মেয়েরাও থাকত। পয়সা না-থাকায় পার্টির পর রাস্তাতেও শুয়ে থেকেছি’, সাফ সাফ জানাচ্ছেন বাবুজি। এও জানাচ্ছেন যে, ‘বাবুজি’ ইমেজে আটকে থাকতে তাঁর কোনও সমস্যাই নেই। ‘এই বাবুজিই তো আমায় পয়সা জোগায়’, অকপট মন্তব্য তাঁর। ‘তবে হ্যাঁ, সব অলোকনাথ-মেমে আমার মোটেও ভাল লাগেনি। কয়েকটা রীতিমতো বিলো দ্য স্ট্যান্ডার্ড। বাদ বাকি উপভোগই করি। পড়লে, হাসতে হাসতে আমার পেটেও খিল ধরে যায়’, একটু থেমে যোগ করলেন বাবুজি।
তারপর? বলাই বাহুল্য, তাঁর আর পর নেই। ছবির পর্দাতেও যেমন, এখন বাস্তব জীবনেও প্রায় প্রতিটি মানুষের আপন হয়ে উঠেছেন অলোকনাথ। সবার ঘরে এখন ঢুকে গিয়েছে বাবুজি-মেমে, ঢুকে গিয়েছে মাথার ভিতরেও। তাহলে?
‘অল দ্য অলোকনাথ ফ্যানস- আশীর্বাদ’!