একদল তরুণ-তরুণী। সবাই এসেছেন মাদক কিনতে। হঠাৎই তাঁদের দিকে ছুড়ে দেওয়া হল একটি চিরকুট। তাতে এক ব্যক্তির নাম ও যোগাযোগ নম্বর। বলা হল আরও মাদকের প্রয়োজন হলে তাঁরা যেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে নেন।
গত বৃহস্পতিবার শরৎ বসু রোডের একটি হোটেল থেকে ধৃত রামকুমার রাই নামে ওই ব্যক্তি এ ভাবেই কলকাতাকে মাদক পাচারের আস্তানা করে নিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। শরৎ বসু রোডে দাঁড়িয়ে দামি গাড়িতে আসা ক্রেতাদের হাতে মাদক তুলে দিত ওই যুবক। আনন্দবাজার পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিতও হয়। রামকুমারকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সে আদতে দিল্লির বাসিন্দা। তার কাছ থেকে কারা নিয়মিত মাদক কিনতেন, সেই খদ্দেরদের একটি তালিকাও পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। দিল্লির টেমাপুরের দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় অভিযুক্তের দু’টি অ্যাকাউন্টও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। দু’টি মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশ জেনেছে, ২০১৩ সালে মোট সতেরো বার অভিযুক্ত কলকাতায় আসে। এখানে তার হয়ে এক লিঙ্কম্যান কাজ করত। সেই লিঙ্কম্যানের মাধ্যমেই কলকাতার মাদকের ঠেকগুলিতে ছড়িয়ে পড়ত অভিযুক্তের মোবাইল নম্বর। মাদকের জন্য সেই নম্বরেই তরুণ-তরুণীরা রামকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নিয়মিত খদ্দের হিসেবে যে ২০০ জন তরুণ-তরুণীর নাম তাদের হাতে এসেছে, তাঁদের সকলেরই বয়স বাইশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। সকলেই উচ্চবিত্ত পরিবারের।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের মাঝামাঝি মুম্বইয়ের ওরলি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় রামকুমার রাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর্থার রোড জেলে সাতাশ মাস বন্দি থাকে সে। সেই সময়ে তার কাছ থেকে আড়াই কিলোগ্রাম চরস পাওয়া গিয়েছিল। ছাড়া পাওয়ার পরে কলকাতাকে নিজের আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় রামকুমার। অভিযুক্ত প্রধানত মানালি ও শিলিগুড়ি থেকে মাদক আনত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এই ঘটনায় পুুলিশ আরও এক ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লিতে প্রেমসাগর তামাং নামে এক ব্যক্তি রামকুমারের শাগরেদ হিসেবে কাজ করত। ঘটনার পর থেকে সে ফেরার। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। কলকাতায় যে বাক্তি তার লিঙ্কম্যান হিসেবে কাজ করছিল, তারও খোঁজ চলছে। সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালে মাদক সেবনের ফলে এক ইন্টার্নের মৃত্যু হয়। অসুস্থ হয়েছিলেন আরও এক ইন্টার্ন। ওই ঘটনার সঙ্গে রামকুমার রাইয়ের যোগাযোগ আছে কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।