অপহরণের ভুয়ো ফোন, হৃদরোগে মৃত্যু প্রৌঢ়ের

ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে এক প্রৌঢ়কে টেলিফোন করে তাঁর কাছে সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। তার ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই ওই ব্যক্তি, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা পরমজিৎ সিংহ জগ্গি (৬০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত ১৬ মার্চের ওই ঘটনার ১৯ দিন পর, শুক্রবার রাতে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ অরুণ গিরি নামে এক যুবককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ থেকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১৩
Share:

মৃত পরমজিৎ সিংহ জগ্গির ছেলে অমরদীপ। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে এক প্রৌঢ়কে টেলিফোন করে তাঁর কাছে সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। তার ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই ওই ব্যক্তি, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা পরমজিৎ সিংহ জগ্গি (৬০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত ১৬ মার্চের ওই ঘটনার ১৯ দিন পর, শুক্রবার রাতে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ অরুণ গিরি নামে এক যুবককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ থেকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, ওই যুবকই মিথ্যা কথা বলে ফোন করেছিল। তার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, যে দিন পরমজিৎবাবুর কাছে ওই ফোন এসেছিল, তার দু’দিন আগে, ১৪ মার্চ তাঁর ছেলে অমরদীপ সপরিবার সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। তাঁদের ফেরার কথা ছিল ১৯ মার্চ। অথচ ফোনে পরমজিৎবাবুকে বলা হয়েছিল, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে সাগরদ্বীপে রাখা হয়েছে।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ফোন করা ওই যুবক পরমজিৎবাবু, তাঁর ছেলে কিংবা তাঁর পরিবারের কাউকে সরাসরি চিনত না। সে শুধু পরমজিৎবাবুর ছেলের একটি ‘বিজনেস কার্ড’ পেয়েছিল এবং সেই সূত্র ধরে সে জেনেছিল, অমরদীপ সেই সময়ে কলকাতায় নেই।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবক অরুণ পেশায় পে-লোডারের চালক। আবার পরমজিৎবাবুদের বংশানুক্রমে যন্ত্রাংশের ব্যবসা। সেই সূত্রেই কোনও ভাবে অমরদীপের বিজনেস কার্ড অরুণের হাতে পৌঁছয়। ওই ফোন আসে ১৬ তারিখ বিকেল চারটে নাগাদ। পরিষ্কার বাংলায় ফোন করে অপহরণের কথা জানিয়ে পরমজিৎবাবুকে বলা হয়, তিনি যেন সাত লক্ষ টাকা দিয়ে অমরদীপকে মুক্ত করে নিয়ে যান। পরমজিতের ভাই গুরপ্রীত সেই সময়ে তাঁর দাদার কাছে ছিলেন। তিনি জানান, ফোনে ওই কথা শোনার পরেই তাঁর দাদা প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ছেলের মোবাইলে বার বার ফোন করে তাঁকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও অমরদীপ বা তাঁর স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না দেখে উত্তেজনা আরও বাড়ে প্রৌঢ়ের। প্রসঙ্গত, বছর দেড়েক আগে পরমজিৎবাবুর স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার কিছুক্ষণ পরে অবশ্য অমরদীপের দিদি গগনমীত তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু ছেলে যে অপহৃত হননি, সে কথা ঠিক মতো জানানো যায়নি ওই প্রৌঢ়কে। কারণ, ততক্ষণে তিনি উত্তেজনার জেরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেখানেই রাত ৯টা নাগাদ মারা যান তিনি। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে পর দিনই কলকাতায় ফিরে আসেন অমরদীপ। তিনি ২০ মার্চ বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ পরমজিৎবাবুর মোবাইলে যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেই নম্বরের কল ডিটেলস রেকর্ড ঘেঁটে অরুণের খোঁজ পায়। তবে যে নম্বর থেকে সে পরমজিৎবাবুকে ফোন করেছিল, সেই সিমকার্ড ভুয়ো নাম-ঠিকানা দিয়ে তোলা হয়েছিল বলে পুলিশকে জানায় অরুণ। ওই যুবক এর আগে একই ভাবে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ফোন করে টাকা হাতিয়েছে কি না, সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement