নীলকমল সাহা
কিছু দিন ধরেই দাঁতের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন মানিকতলার বাসিন্দা নীলকমল সাহা। পরিবার সূত্রের খবর, স্থানীয় দন্ত চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি নীলকমলবাবুর তিনটি দাঁত তুলে দেন। কিছু দিন বাদে ফের যন্ত্রণা। ফের দাঁত তোলার পর্ব। তার পরে আবারও দাঁতের যন্ত্রণা। এ বার নীলকমলবাবুর ডান চোয়ালে ছোট টিউমারের মতো কিছু দেখা যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন পরিজনেরা। জানা যায়, চোয়ালের হাড়ে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ‘সিনক্রোনাস ডুয়াল প্রাইমারি ইন্টার-ওশিয়োস অ্যাডিনয়েড সিস্টিক কার্সিনোমা অব ম্যান্ডিবল’। চিকিৎসকদের মতে, সচরাচর শোনা যায় না এই ক্যানসারের কথা। তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি সাড়ে চার লক্ষে এক জন এই রোগে আক্রান্ত হন।
একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তিন জন চিকিৎসক জানিয়ে দেন, দ্রুত নীলকমলবাবুর অস্ত্রোপচার জরুরি। কিন্তু দেড় মাসের আগে অস্ত্রোপচারের তারিখ মিলছিল না তাঁর। দিশাহারা পরিজনেরা অবশেষে দ্বারস্থ হন বাইপাসের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালের। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে আরও দুই শল্য চিকিৎসক তাপস কর ও সঞ্জয় গুপ্ত এবং প্লাস্টিক সার্জন সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য অ্যাপোলো গ্লেনেগল্স হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে নীলকমলবাবুর ডান চোয়াল বাদ দেন। বাঁ পায়ের থেকে হাড়-মাংস নিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম চোয়াল।
এর কিছু দিন পরে রেডিয়েশন শুরুর আগে সিটি স্ক্যান করতেই নীলকমলবাবুর বাঁ চোয়ালের হাড়ে টিউমারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয় সেই চোয়ালও। তবে এ বার আর পায়ের থেকে হাড় নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাঁজরের পাশের মাংস কেটে বাদ দেওয়া চোয়ালের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়। দু’টি দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পরে বর্তমানে চিকিৎসক মুক্তি মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রেডিয়েশন চলছে নীলকমলবাবুর।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁর বাড়ির লোক। আর জড়িয়ে যাওয়া কথায় বারবার চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, বাকি জীবন যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে তাঁকে। দন্ত চিকিৎসক সৌমেন ভাওয়ালের পরামর্শ, কোনও ভাবেই যাতে সংক্রমণ না হয় তাই নজর দিতে হবে দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায়।
খাওয়া চলবে না মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় বা যে কোনও শক্ত খাবার। মুখের মধ্যে নতুন করে কোনও টিউমার হচ্ছে কি না, সে দিকেও সব সময়ে খেয়াল রাখতে হবে।ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “এ ধরনের ক্যানসার বিশেষ শোনা যায় না। চিকিৎসার বড় ধাপ অতিক্রম করা হলেও এখনও সতর্কতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মুখের দু’দিকেই রেডিয়েশন পৌঁছনো সব চেয়ে জরুরি। সেটাই এখন ডাক্তারদের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।”