ছাদের এই অংশ থেকে নীচে পড়ে যান সুইটি সূত্রধর (ইনসেটে)। মঙ্গলবার রাতে, যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র
বর্ষবরণের মাঝেই গভীর রাতে একটি মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন বহুতলের বাসিন্দারা। কিন্তু পুলিশ এসে কাউকে খুঁজে পায়নি। পরে সেই বহুতলের দু’টি ভবনের মাঝের ফাঁকা জায়গা থেকে উদ্ধার হল এক তরুণীর রক্তাক্ত দেহ। মৃতার নাম সুইটি সূত্রধর (২৯)। ঘটনাটি ঘটেছে যাদবপুর থানা এলাকার পোদ্দারনগরে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, বহুতলের ছাদ থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছে সুইটির। তবে সেটি দুর্ঘটনা না কি আত্মহত্যা, না কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছে, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত সুইটির স্বামী কুন্তল আচার্যকে জেরা করছে পুলিশ। তাতে কিছু অসঙ্গতিও মিলেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, যাদবপুর পোদ্দারনগর এলাকার ২/২৪ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন কুন্তল এবং তাঁর স্ত্রী সুইটি। পুরুলিয়ার বাসিন্দা কুন্তলের পারিবারিক হোটেল ব্যবসা রয়েছে। সুইটি একটি কল সেন্টারে কর্মরতা ছিলেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কুন্তলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আসানসোলের বাসিন্দা সুইটির। পোদ্দারনগরের এই ফ্ল্যাটে তাঁরা আসেন মাস চারেক আগে। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ওই বহুতলের পুরনো আবাসিকেরা মিলে ছাদে একটি ছোট পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেখানেই গভীর রাত পর্যন্ত মদ খাওয়া, হইহুল্লোড় চলছিল। তবে নতুন আসায় ওই পার্টিতে কুন্তল এবং সুইটি যোগ দেননি। পরে ছাদে গিয়ে নিজেদের দিকের অংশে মদ নিয়ে বসেন তাঁরা।
বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, একটা সময়ের পরে তাঁরা সকলে একে একে নেমে এলেও কুন্তল আর সুইটি সেখানেই ছিলেন। যদিও পুলিশের কাছে কুন্তকের দাবি, শরীর খারাপ লাগায় আবাসিকেরা নেমে আসার পরপর তিনিও নেমে আসেন। এ দিকে, গভীর রাতে একটি মেয়ের কান্নার আওয়াজ পেয়ে ফের পুরনো বাসিন্দাদের কয়েক জন ছাদে যান। কিন্তু সেখানে কাউকে দেখেননি তাঁরা। এর পরেই আড়াইটে নাগাদ যাদবপুর থানায় ফোন করে পুলিশকে খবর দেন এক বাসিন্দা। পুলিশ এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেও কাউকে পায়নি।
বুধবার সকালে তরুণীর স্বামী কুন্তল পড়শিদের জানান, তিনি স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ফের যাদবপুর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, দু’জোড়া চপ্পল পড়ে রয়েছে সেখানে। পড়ে আছে কাচের গ্লাসও। তার পাশেই রয়েছে ছোট্ট চৌবাচ্চার মতো ফাঁকা জায়গা।
ওই ফাঁকা জায়গায় ঢোকার দরজার তালা খুলে পুলিশ দেখে, সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সুইটি। তাঁকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকেরা এবং ফরেন্সিক দল। তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে ফরেন্সিকের ডিসি ওয়াসিম রাজা জানান, উপর থেকে পড়ে যাওয়ার যে চিহ্নগুলি ঘটনাস্থলে মিলেছে, তাতে এটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তবে মৃত্যুর আগে ওই তরুণীর দেহে কোনও আঘাত হয়েছিল কি না, সেটা অ্যান্টি-মর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। খবর দেওয়া হয়েছে সুইটির বাবা-মাকে।