প্রতীকী ছবি
নিমাই মণ্ডল। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। পেশায় যোগশিক্ষক। তিন মাস ধরে আয় বন্ধ। রোজগার ১২ হাজার টাকা থেকে নেমেছে শূন্যে। সোনারপুর থানা এলাকার প্রতাপনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা নিমাইবাবুকে তাই পেটের দায়ে কুড়ুল নিয়ে নামতে হয়েছে একশো দিনের কাজে। তাঁর জব কার্ড নেই। আর্থিক অনটন দেখে অন্যের দয়া হওয়ায় পেয়েছেন ওই কার্ড। এক মাস কাজের পরেও অবশ্য সে টাকা হাতে পাননি। বর্ষায় বন্ধ হয়েছে সেই কাজও। রেশনের চাল আর লোকের ভরসায় চলছে সংসার। আমপানে ভেঙে গিয়েছিল বাড়ির চালের একাংশ। এখন প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছেন সেই অংশটা।
ভাই এবং আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে চলছে তারকেশ্বরের হরিপালের বাসিন্দা কাল্টু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসার। কলকাতার একটি শারীরচর্চা কেন্দ্রের যোগশিক্ষক হিসেবে নির্দিষ্ট বেতন ছিল তাঁর। তা ছাড়া, ব্যক্তিগত ভাবেও শেখাতেন অনেককে। মাসে হাজার বিশেক টাকা আয় ছিল। আয় সব বন্ধ। বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার অথৈ জলে।
রাজারহাটের ইন্দিরানগরের বাসিন্দা অভিষেক সিংহের চিন্তা বছর সত্তরের মা এবং আট বছরের ছেলেকে নিয়ে। ডায়াবিটিস ও হার্টের রোগী মায়ের কথা ভেবে কাজের লোক বন্ধ করতে পারছেন না। টাকা দিতে না-পারায় ছেলের অনলাইন ক্লাস বন্ধ। ২৫ হাজার টাকা মাসিক আয় এক ধাক্কায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ধারদেনায় জেরবার অবস্থা। এ ভাবে রোজগার বন্ধ থাকলে মায়ের চিকিৎসা কী ভাবে চালাবেন, সেই চিন্তাই তাঁকে ভাবাচ্ছে।
নিমাই, কাল্টু এবং অভিষেকের মতোই অসংখ্য যোগশিক্ষক এখন ভাবছেন, তাঁদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উপায় তবে কী? তাঁদের প্রশ্ন, ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে লকডাউন। আনলক ফেজ় ওয়ানে খুলে দেওয়া হয়েছে শপিং মল, দোকানপাট। কিন্তু যোগব্যায়াম বা শারীরচর্চা কেন্দ্র খোলা নিয়ে সরকারের এত আপত্তি কেন?
আজ, রবিবার বিশ্ব যোগ দিবস। ওঁদের প্রশ্ন, সুস্থ থাকতে যোগব্যায়ামের ভূমিকা কেন শুধু আলোচনায় আটকে থাকবে? কেন অসংখ্য রোগী, যাঁরা মূলত যোগচর্চার উপরে নির্ভর করে আছেন, তাঁদের কথা ভাবা হবে না? একই প্রশ্ন ভারতী সাহা, বন্দনা ভৌমিক কিংবা পার্কিনসন্সে আক্রান্ত বিজয় মিত্রের। বাড়িতে এসে বা সেন্টারে গিয়ে যোগব্যায়াম সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে বাড়ছে ওঁদের শারীরিক সমস্যা।
এ শহরেরই এক শারীরচর্চা কেন্দ্রের কর্তা শুভব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, “পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এত মানুষের আয় বন্ধ, জানি না কবে সমাধানসূত্র বেরোবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশ্ব যোগ দিবসে আমরা সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনশন করব। এটাই হবে আমাদের নিঃশব্দ প্রতিবাদ।”