এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৮ হাজার ই-ফাইল চালাচালি হচ্ছে। ফলে সময় তো বাঁচছেই, গতিও এসেছে সরকারি কাজে।’’ সেই ‘গতির রাজ্যে’ কেএমডিএ-র ওয়েবসাইটে এই তথ্য-ভ্রান্তি যথেষ্ট ‘অস্বস্তিকর’ বলে মেনে নিচ্ছে প্রশাসনের একাংশ।
কেএমডিএ-র ওয়েবসাইটে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে নাম রয়েছে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের।
দফতর রদবদল হয়েছে সপ্তাহ তিনেক হল। কিন্তু সেই দফতরের অধীনস্থ সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য পরিবেশনের ধারাবাহিকতায় বদল ঘটেনি! যে কারণে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (কেএমডিএ) ওয়েবসাইটে সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে এখনও জ্বলজ্বল করছে বর্তমানে রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছবি!
ওয়েবসাইটে চন্দ্রিমাকে উল্লেখ করা হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে। অথচ, মার্চের প্রথমেই মন্ত্রিসভায় রদবদল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে রদবদলের হাত ধরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর চন্দ্রিমার কাছ থেকে ফিরে পেয়েছিলেন মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং চন্দ্রিমাকে অর্থ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই ভ্রান্তি কেএমডিএ-র ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেই রয়েছে। কারণ পুর ও নগরোন্নয়ন এবং অর্থ দফতরের ওয়েবসাইটে ঠিক তথ্য, অর্থাৎ ফিরহাদকে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী এবং চন্দ্রিমাকে অর্থমন্ত্রী হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও কেএমডিএ-র মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, সরকারি-বেসরকারি যে কোনও দফতর বা সংস্থার ক্ষেত্রে তাদের ওয়েবসাইট আজকের দিনে জনসংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দফতর, সংস্থা, পরিষেবা, সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী, কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে— এমন হাজারো বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য প্রত্যেকে পান সেই সংস্থা বা দফতরের ওয়েবসাইট থেকেই। সেখানে ভুল তথ্য একেবারেই কাম্য নয়।’’ আর এক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এতে প্রমাণিত, ই-গভর্ন্যান্স নিয়ে সরকারি সাফল্যের প্রচারের মধ্যেও ফাঁক রয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গকে ‘ডিজিটাল এনেবেলড স্টেট’ বা ডিজিটাল-সক্ষম রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছে সরকার। সেই উদ্দেশ্যে ই-অফিস, ই-আবগারি, ই-নথিকরণ, ই-ভূচিত্র, ই-বাহন, ই-সারথি সহ একাধিক প্রকল্পও চালু হয় পুরোদমে।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত ৫৪টি দফতরের সচিবালয় ২,৫৭,৬৭৮টি, ১৮০টি ডিরেক্টরেট ১,৬২,৯২৫টি এবং ২২টি জেলা প্রশাসন ১,০৩,৮৯০টি ই-ফাইল ‘জেনারেট’ করেছে। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৮ হাজার ই-ফাইল চালাচালি হচ্ছে। ফলে সময় তো বাঁচছেই, গতিও এসেছে সরকারি কাজে।’’
সেই ‘গতির রাজ্যে’ কেএমডিএ-র ওয়েবসাইটে এই তথ্য-ভ্রান্তি যথেষ্ট ‘অস্বস্তিকর’ বলে মেনে নিচ্ছে প্রশাসনের একাংশ। এর আগেও একাধিক বার কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটেছিল। ফিরহাদ হাকিম মেয়র হওয়ার পরেও ওয়েবসাইটে মেয়রদের নামের তালিকায় তাঁর নাম ঠিক সময়ে যোগ করা হয়নি। পরে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে আসার পরেও কাউন্সিলর হিসেবে ফিরহাদের নাম ওঠেনি ওয়েবসাইটে। সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরে অবশ্য তা সংশোধন করা হয়েছিল। এবং কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়াতে সতর্ক থাকা হবে।
কিন্তু সেই সতর্কতা রাজ্য সরকারের সমস্ত স্তরে যে এখনও পুরোপুরি আসেনি, কেএমডিএ-র ওয়েবসাইটই তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির পাশে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে এখনও রয়ে গিয়েছে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছবি!