আবছায়া: কুয়াশায় ঢেকেছে পথ। বৃহস্পতিবার, ইএম বাইপাসের কাছে পরমা আইল্যান্ডে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কালীপুজোর এখনও বাকি এক সপ্তাহ। বাজি ফাটা, পোড়ানো কিছুই শুরু হয়নি। তার আগেই শহরের হাওয়ার মান ‘খারাপ’ হতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে কালীপুজোর আগেই বাতাসের মান আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশকর্মী এবং চিকিৎসকেরা। করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা বড় ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
এমনিতে প্রতি বছরই অক্টোবরের শেষ থেকে বাতাসের মানের অবনমন শুরু হয়। সেই কারণে পরিবেশকর্মী, পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংগঠন, চিকিৎসক-সহ সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে চলতি বছরে বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। তার পরেই বৃহস্পতিবার নবান্নে এক বৈঠকে সব ধরনের বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এমনকি বাজি মজুত, সরবরাহ এবং বিক্রিও করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর পরেও কেউ বাজি ফাটালে তাঁর কড়া এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন।
কারণ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুসূচকের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) নিরিখে গত ১০ দিনের মধ্যে আট দিনই কলকাতার বাতাসের মান ছিল সহন মাত্রার বেশি। যেমন, গত দু’দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার বাতাসের মান ছিল খারাপ (পুয়োর) এবং ছ’দিন ছিল মাঝারি মাপের দূষণ (মডারেট)। বাকি দু’দিনের মধ্যে এক দিন সেই মান ছিল সন্তোষজনক (স্যাটিসফ্যাক্টরি), এক দিন ছিল ভাল (গুড)।
আরও পডুন: বাজি তৈরি হয় উনুনের পাশেই
আরও পডুন: জেলের পাশেই হুড়মুড়িয়ে ভাঙল ক্রেন, জখম পাঁচ
আর দূষক (প্রমিনেন্ট পলিউট্যান্ট) হিসেবে বার বার যার কথা বলা হচ্ছে, যা করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা, বাতাসে সেই অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি সর্বাধিক মাত্রায় ছিল বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘বছরের এই সময়ে এমনিতেই বাতাসের মান খারাপ হতে শুরু করে। এ বছরে করোনা সংক্রমণের কারণে বাজি ফাটানো হলে সেই পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।’’
শহরের বায়ুদূষণ রোধে রূপরেখা তৈরির জন্য কলকাতা পুরসভা গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সতর্কতায় ফাঁকি দিলে পরিণাম কী হতে পারে, তা আমাদের বিভিন্ন দেশকে দেখে শেখা উচিত। অনেক দেশকেই আবার লকডাউনের পথে যেতে হচ্ছে।’’ ‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর পূর্বাঞ্চলের সেন্ট্রাল কাউন্সিল মেম্বার অয়ন ঘোষ বলছেন, ‘‘নতুন ভাবে সংক্রমিতের পাশাপাশি আর একটি বিষয়ও মাথায় রাখা প্রয়োজন। তা হল, যাঁরা করোনা থেকে সেরে উঠছেন তাঁদেরও পুরো সুস্থ হতে অনেক সময় লাগছে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুব্রত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শহরের অনেক অঞ্চলেই করোনা রোগীরা রয়েছেন। তাই সব দিক বিবেচনা করে এ বছর বাজি ফাটানো থেকে বিরত থাকাই উচিত হবে।’’