Kolkata Metro: মুখবন্ধ প্রকোষ্ঠে আটক, নীচের দিকে হেলে যাওয়া ‘চণ্ডী’র দর্শন অবশেষে মিলল বৌবাজারে

দীর্ঘ আট মাসের চেষ্টায় কংক্রিটের স্তর কেটে সম্প্রতি চণ্ডীর দেখা পেয়েছেন মেট্রো নির্মাণ সংস্থার আধিকারিকেরা।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১৬
Share:

উদ্ধার: এই আস্তরণ ভেঙেই বার করতে হচ্ছে চণ্ডীকে। নিজস্ব চিত্র।

‘এক বার না পারিলে দেখো শতবার’। তবে গত আট মাসে শতবার, নাকি তার কম-বেশি চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটা জানা যায়নি। অবশেষে যে তার দেখা মিলেছে, এটাই সুখবর। যা মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে ‘চণ্ডী’র উদ্ধারকাজে নিযুক্ত মেট্রোর কর্মীদের।

Advertisement

টাটকা খবর হল, কংক্রিটের আস্তরণে ঢাকা পড়ে থাকা টানেল বোরিং মেশিন (টি বি এম) চণ্ডীর দেখা মিলেছে বৌবাজারে। তবে সুড়ঙ্গের নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে সে মাটির প্রায় দেড় মিটার নীচের দিকে হেলে গিয়েছে। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত চণ্ডীর অবশিষ্ট কাজ শিয়ালদহের দিক থেকে শেষ করেছে টি বি এম ‘উর্বী’। ওই জোড়া টি বি এম-কে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করাই মেট্রো কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য। বছর দুয়েক আগের কথা। ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ নির্মাণ চলছিল তখন। সেই দিন দুর্ঘটনায় পড়েছিল চণ্ডী।

মাটি খননের সময়ে জল এবং বালি মেশানো কাদামাটি টি বি এমের সামনের অংশ দিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকতে থাকায় আচমকা ধস নামে
বৌবাজার এলাকায়। অনেকটা গভীরের মাটি ধুয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকতে থাকায় বৌবাজার অঞ্চলের অনেক পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ে। ঘরছাড়া হয় বহু পরিবার। মাটির সেই ধস
ঠেকাতে চণ্ডীর পিছনে পর পর দু’টি দেওয়াল তৈরি করে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করা হয়। চণ্ডী যে মুখবন্ধ প্রকোষ্ঠে আটকা পড়ে, সেখানে জল ভর্তি করা হয়। এ ভাবেই পাল্টা চাপ তৈরির মাধ্যমে মাটির ধুয়ে আসা বন্ধ করা হয়। পরে ওই অঞ্চলের নরম মাটিকে কিছুটা স্থায়িত্ব দিতে দীর্ঘদিন ধরে জল এবং কংক্রিটের মিশ্রণ মাটির গভীরে পাঠানো হয়। ওই সময়ে তরল কংক্রিট চুঁইয়ে সুড়ঙ্গের মুখবন্ধ অংশে ঢুকে পড়ে। ফলে চণ্ডীকে ঘিরে দুর্ভেদ্য কংক্রিটের আস্তরণ তৈরি হয়। মাটির নীচের ওই অংশ জমাট বেঁধে যাওয়ায় ওই টি বি এম-কে উদ্ধারের পরিশ্রম বেড়ে যায়।

Advertisement

এ দিকে অন্য টি বি এম, উর্বী পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ তৈরির নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিয়ালদহের দিক থেকে চণ্ডীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে সে নামে। এপ্রিলে ওই কাজ শেষ হলে বৌবাজারে ৪০ মিটার দীর্ঘ, ১৫ মিটার প্রস্থ এবং ২২ মিটার গভীর একটি কংক্রিটের চৌবাচ্চা নির্মাণ শুরু হয়। ওই চৌবাচ্চা দিয়েই দু’টি টি বি এম-কে উদ্ধার করার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গের গভীরে পৌঁছতে প্রায় কালঘাম ছোটার অবস্থা। চণ্ডীকে ঘিরে কংক্রিটের আস্তরণ তৈরির সমস্যা তখনই বোঝা যায়।

দীর্ঘ আট মাসের চেষ্টায় কংক্রিটের স্তর কেটে সম্প্রতি চণ্ডীর দেখা পেয়েছেন মেট্রো নির্মাণ সংস্থার আধিকারিকেরা। কিন্তু সেটি তার নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে দেড় মিটার নীচের দিকে হেলে গিয়েছে। নরম মাটিতে যন্ত্রের বিপুল ভারের কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। ফলে মাটির আরও গভীরে গিয়ে তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে আনতে হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রে খবর, আপাতত কংক্রিটের বিশেষ চৌবাচ্চা (রিট্রিভাল শ্যাফ্ট) থেকে প্রথমে উর্বীকে এবং পরে চণ্ডীকে কেটে উদ্ধার করা হবে। তবে উর্বীর প্রায় আট মিটার দীর্ঘ ইস্পাতের বহিরাবরণ পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের অংশ হয়ে থেকে যাবে। তার ভিতরের যন্ত্রাংশ কেটে বার করা হবে।

মেট্রো সূত্রের খবর, কয়েক মাসের মধ্যে জোড়া টি বি এম উদ্ধারের পরে চৌবাচ্চার অংশটিতে উপর থেকে ‘কাট অ্যান্ড কভার’ পদ্ধতিতে ছাদ ঢালাই করে সুড়ঙ্গ নির্মাণ হবে। ওইটুকু দূরত্বের কাজ শেষ হলেই পশ্চিম সুড়ঙ্গ হাওড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সম্পূর্ণ জুড়ে যাবে। অনেক বাধা পেরিয়ে চণ্ডীর দেখা মেলায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্বভাবতই খুশি। আশা করছেন, বাকি কাজও কয়েক মাসে শেষ করা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement