Blood Donation On Wheels

বেতন পাচ্ছেন না ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবিরের কর্মীরা

করোনা অতিমারির শুরুর দিকে, অর্থাৎ ২০২০ সালে রাজ্যে শুরু হয় ‘ব্লাড ডোনেশন অন হুইলস’ পরিষেবা। ভ্রাম্যমাণ ১০টি গাড়ি কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে রক্তদান শিবির করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৬
Share:

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রক্তদান শিবির। প্রতীকী ছবি।

রক্তদানের মতো জীবনদায়ী কর্মসূচির সঙ্গে তাঁরা যুক্ত। অথচ, কোন খাত থেকে টাকা আসবে, সেই টানাপড়েনে তিন মাস ধরে তাঁদেরই বেতন বন্ধ। এমনই অবস্থা রাজ্যের ‘ব্লাড ডোনেশন অন হুইলস’ বা ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবিরের গাড়ির চালক ও সহযোগীদের। অনিয়মিত দৈনিক মজুরির ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্লাড ট্রান্সফিউশন গাড়ির চালকদেরও।

Advertisement

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রক্তদান শিবির। এর উপরে বহু রোগীর জীবন নির্ভর করে। কিন্তু সেই কর্মসূচি সংগঠিত করার জন্য যে মানুষগুলি দিনের পর দিন গাড়ি নিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পৌঁছচ্ছেন, তাঁদের বেতন বন্ধ কেন? ওই গাড়িতে যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী বা আধিকারিকেরা যাচ্ছেন, তাঁরা যদি প্রতি মাসে ঠিক মতো বেতন পান, তা হলে চালক ও সহযোগীদের ক্ষেত্রে তা অনিয়মিত কেন? সমস্যা যে হয়েছিল, তা স্বীকার করে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘সমস্যাটি খুব শীঘ্রই মিটে যাবে। সেই মতো ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাড়াতাড়ি ওঁরা বেতন পেয়ে যাবেন।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনা অতিমারির শুরুর দিকে, অর্থাৎ ২০২০ সালে রাজ্যে শুরু হয় ‘ব্লাড ডোনেশন অন হুইলস’ পরিষেবা। ভ্রাম্যমাণ ১০টি গাড়ি কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে রক্তদান শিবির করে। গাড়ির ভিতরেই রক্তদানের সমস্ত রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। সূত্রের খবর, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ওই গাড়িগুলি নামানো হয়েছিল। সেই সময়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তরফে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ১০ জন চালক ও ১০ জন সহযোগী বা হেল্পার নেওয়া হয়। চালকদের মাসিক সাড়ে ১১ হাজার এবং সহযোগীদের সাড়ে আট হাজার টাকা মতো বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু আচমকাই সেই বেতন কোন খাত থেকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। তাতেই গত ডিসেম্বর থেকে বন্ধ বেতন। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আশঙ্কা, দীর্ঘ দিন বেতন না পেয়ে আচমকাই যদি ওই চালক বা সহযোগীরা ধর্মঘট শুরু করেন, তা হলে আখেরে ক্ষতি সাধারণ মানুষের। কারণ, চালকেরা কাজ বন্ধ রাখলে ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবির ব্যাহত হবে। গ্রীষ্মকালে এমনিতেই রক্তের চাহিদা বাড়ে। তার মধ্যে এমন ঘটলে আরও সঙ্কট তৈরি হবে।

Advertisement

সূত্রের খবর, ওই গাড়ি ছাড়াও রাজ্যে আরও ২০টির মতো ‘বিটি ভ্যান’ (ব্লাড ট্রান্সফিউশন ভ্যান) রয়েছে। বিভিন্ন রক্তদান শিবিরে ওই গাড়িতে করে শয্যা, রক্তের ব্যাগ-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। আবার ওই গাড়ির ফ্রিজে ভরেই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নিয়ে আসা হয়। জানা যাচ্ছে, সেই গাড়ির জন্য যে ২০ জন চালক রয়েছেন, তাঁরা দৈনিক ৪০০ টাকার কিছু বেশি মজুরি পান। অভিযোগ, তা-ও দেওয়া হয় অনিয়মিত। এমন ঘটনা বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেই মত ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। রক্তদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় যুক্ত চালকেরাও অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁরা যদি সময়ে বেতন না পান, তা হলে তার থেকে লজ্জার কিছু নেই। মেলা, খেলা, উৎসব, এমনকি ক্লাবকে অনুদান দিতেও টাকার কোনও রকম অভাব নেই। কুড়ি টাকার সরকারি পরিষেবা দিতে লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু প্রাপ্য টাকা দিতেই যত সমস্যা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement