প্রতীকী ছবি।
দশ বছর আগে দায়ের হওয়া বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলার ফয়সালা হয়নি এখনও। এরই মধ্যে দ্বিতীয় বার বিয়ে করার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রীর আগের বিয়ের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না তিনি। তাঁরই অভিযোগের ভিত্তিতে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভজিৎ চৌধুরী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, গত দশ বছরে ওই মহিলা আরও কাউকে বিয়ে করেছেন কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে।
আদালত সূত্রের খবর, একবালপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা ২০০৬-এর মে মাসে নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা নাজির হোসেন চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছেলে হয়। ২০০৯ সালে ওই মহিলা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। দায়ের করেন বধূ-নির্যাতনের মামলা। বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলাও শুরু হয়। আদালতের নির্দেশে মহিলা খোরপোষও পেতে শুরু করেন।
এর মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি একবালপুর থানা এলাকার বাসিন্দা কওসর আলি নামে এক ব্যক্তি আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে আইনজীবী মারফত ওই মহিলার বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানান। তাঁর দাবি, মহিলা তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তিনি যে আগে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর একটি সন্তান রয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না কওসর। কওসর জানান, গত বছরের মার্চে তাঁর সঙ্গে ওই মহিলার বিয়ে হয়। তার পরেই অশান্তি শুরু হয় সংসারে। মহিলা বাড়ি ছেড়ে চলে যান ও বিবাহ-বিচ্ছেদের হুমকি দেন। কয়েক লক্ষ টাকা দাবিও করেন। শুধু তা-ই নয়, আলমারিতে থাকা টাকা-গয়নাও তিনি নিয়ে গিয়েছেন বলে কওসরের অভিযোগ। কওসরের দাবি, আগের বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি গোপন করেই মহিলা তাঁকে বিয়ে করেন। শুক্রবার অভিযোগ শুনে বিচারক পুলিশকে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করতে বলেন। মহিলার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে দ্বিতীয় বিয়ে ও তোলাবাজি-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করতেও নির্দেশ দেন তিনি।
কওসরের আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কাকতালীয় ভাবে ওই মহিলার দুই স্বামীই আইনি পরামর্শ নিতে আমার কাছে এসেছিলেন। নাজির হোসেন চৌধুরীর মামলা আগে দায়ের করা হয়েছিল। সম্প্রতি কওসর আলিও এসেছিলেন বিচারকের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানানোর জন্য। গত দশ বছরে ওই মহিলা এমন আরও বিয়ে করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক সেই মতোই নির্দেশ দিয়েছেন।’’
নাজির হোসেন চৌধুরী বললেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে অধিকাংশ সময়েই স্ত্রী মা-বাবার বাড়িতে থাকত। ২০০৯ সালে ন’মাসের ছেলেকে নিয়ে ও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।’’ নাজিরের অভিযোগ, দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। প্রথমে অশান্তি করে গৃহত্যাগ। পরে ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়া। সেই সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ ও খোরপোষ দাবি। তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলা আরও ক’টি বিয়ে করেছে, খোঁজ নিয়ে দেখুক পুলিশ। আমি খোরপোষ বন্ধ করতে আবেদন করেছি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, মহিলার ছেলে এখন তার দিদিমার কাছেই থাকে।
মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা। আমি সব নথি আদালতে জমি দিয়েছি। আমিও বধূ-নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছি।’’