—প্রতীকী ছবি
ছেলে প্রবাসে। মেয়ের সংসার ভিন্ রাজ্যে। সল্টলেকের বৃদ্ধ দম্পতির ভরসা ছিল বছর পঁচিশের তরুণী, ব্যক্তিগত সচিব। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেই পরিকল্পনা করে ওই দম্পতির সারা জীবনের সঞ্চয় ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগর পুলিশ সোমবার বেহালার বাসিন্দা ওই তরুণীকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
অভিযোগ, জুলাই থেকেই একটি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ঠান্ডা মাথায় টাকা সরাতে শুরু করে অভিযুক্ত। বৃদ্ধ দম্পতি মোবাইলে ততটা সড়গড় না হওয়ায় টাকা তোলা সংক্রান্ত বার্তা ওই তরুণীই মুছে ফেলেছিল বলে অভিযোগ। নভেম্বরে বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে চেক মারফত বিল মেটাতে গিয়ে জানতে পারেন ব্যাঙ্কে টাকা নেই।
দম্পতির জামাই কাশ্মীরে কর্মরত, সেনাবাহিনীর অফিসার। তিনি তাঁর বন্ধু, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শান্তনু ঘোষকে বলেন বিষয়টি দেখতে। এক সময়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে থাকা শান্তনুবাবু ডিসেম্বরে তদন্তে নামেন। তদন্তের শেষে শান্তনুবাবু তাঁর রিপোর্ট তুলে দেন পুলিশের হাতে। তাঁর দাবি, সরিয়ে নেওয়া টাকা থেকে তরুণী বিবাহবিচ্ছেদে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। দামি বিপণি থেকে দু’লক্ষ টাকার সুগন্ধী কিনেছে।
আরও দশ লক্ষ টাকা সে কোথায় রেখেছে তা জেরা করতে ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
শান্তনুবাবু মঙ্গলবার জানান, তিনি ব্যাঙ্কের প্রতিটি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তদন্ত নামেন। জানা যায়, বৃদ্ধ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাতেন। সেই সংস্থার অ্যাকাউন্ট ছাড়াও তাঁর এবং বৃদ্ধার যুগ্ম নামে মোট তিনটি অ্যাকাউন্ট ছিল। তার একটিতে ছিল বড় অঙ্কের টাকা। অন্য দু’টিতে ছিল ১-২ লক্ষ টাকা। লকডাউনে বৃদ্ধকে দিয়ে তরুণী নতুন অ্যাকাউন্ট খোলায়। অনলাইনে বিল মেটানোর নাম করে সে বৃদ্ধের নামে টাকা ট্রান্সফার শুরু করে।
হিসেব করে প্রধান অ্যাকাউন্টের টাকা নতুন অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলে ওই তরুণী। তার পরে কখনও সল্টলেকের এটিএম থেকে, কখনও বেহালায় বাড়ির কাছের এটিএম থেকে কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে থাকে। শান্তনুবাবু যখন তদন্তে নামেন, তখন ওই তরুণী ছুটি নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিল। সে ফেরার আগেই বৃদ্ধ তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।