Murder

ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা পিয়ালির, দাবি পুলিশের

পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা করেই বাবাকে মাঝরাতে চাঁদপাল জেটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল পিয়ালি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

মাঝরাতে বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পরে ট্যাক্সি ধরে গঙ্গার ঘাট থেকে সোজা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়েছিল অভিযুক্ত মেয়ে। সেখানে চিকিৎসকদের সে জানায়, তার পেটে ব্যথা হচ্ছে। যদিও চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তার তেমন কিছুই হয়নি। এর পরে কিছু ক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সকালের দিকে বাড়ি ফিরে যায় ওই তরুণী। চাঁদপাল জেটির কাছে বিশ্বনাথ আঢ্য নামে এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ধৃত মেয়ে পিয়ালিকে জেরা করে এই তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা করেই বাবাকে মাঝরাতে চাঁদপাল জেটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল পিয়ালি। দু’বোতল কেরোসিনও আগে থেকেই জোগাড় করে রেখেছিল সে। অভিযুক্তের মামাবাড়ি বেলেঘাটায়। ঘটনার আগের দিন সেখান থেকেই সে ওই কেরোসিন সংগ্রহ করেছিল।

তদন্তকারীদের অনুমান, বাবাকে গঙ্গার ধারে কোথাও বসিয়ে মদ্যপান করিয়েছিল মেয়ে। এর পরে সেখানেই রাতের খাবার খান বিশ্বনাথ। খায় পিয়ালিও। তবে সেটা ঠিক কোন জায়গায়, তা নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘একাধিক ভুল তথ্য দিয়ে অভিযুক্ত আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ সেই কারণেই শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ক্রিস্টোফার রোডের বাড়ি থেকে বেরোলেও রাত দেড়টা পর্যন্ত বাবাকে নিয়ে পিয়ালি কোথায় ছিল, তা জানা যায়নি। রাত দেড়টা নাগাদ বিশ্বনাথ ও পিয়ালিকে একসঙ্গে চাঁদপাল জেটির কাছে একটি পার্কে ঢুকতে দেখা গিয়েছে সিসিটিভি-র ফুটেজে। আবার আগুন লাগানোর পরে সওয়া ২টো নাগাদ পিয়ালিকে সেখান থেকে বেরোতেও দেখা যায়। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পাশ করা পিয়ালির দাবি, বাবাকে নিয়ে দিঘার বাস ধরবে বলে প্রথমে বাবুঘাটে গিয়েছিল সে। পরে সে কথা অস্বীকার করে পিয়ালি।

Advertisement

পিয়ালির বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি দেখে পুলিশের অনুমান, সে কিছু আড়াল করতে চাইছে। পুলিশের সন্দেহ, খুনের ঘটনায় তৃতীয় কোনও ব্যক্তি পিয়ালিকে সাহায্য করে থাকতে পারে। তেমন কারও খোঁজ পেতে চাঁদপাল জেটি, বাবুঘাট সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

খুনের পিছনে সম্পত্তিগত কারণও থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের মতে, পিয়ালি একা মেয়ে। তাই আর্থিক সঙ্কটে থাকা পিয়ালি বাবাকে সরিয়ে দিতে পারলে ওই সম্পত্তির মালিক হত। এ ব্যাপারে পিয়ালির কাকা ও অন্য আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাবার সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা হত মেয়ের। মেয়ের জীবনযাপন নিয়েও বাবার আপত্তি ছিল। মেয়ের আবার দাবি, বাবা মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করতেন।

গত রবিবার ভোরে উত্তর বন্দর থানার পুলিশ চাঁদপাল জেটির কাছে একটি পার্ক থেকে বিশ্বনাথের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে। দেহের কাছে মেলে দু’টি কেরোসিনের বোতলও। পুলিশের প্রথমে সন্দেহ হয়, ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। এলাকায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে একটি ব্যাগ উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। তাতে একটি নম্বর মেলে। সেই নম্বরে ফোন করে বিশ্বনাথের বাড়ির ঠিকানা পায় পুলিশ। পুলিশকে মৃতের ভাই কার্তিক জানান, আগের রাতে মেয়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ। এর মধ্যেই রিকশায় চেপে পিয়ালি বাড়িতে ফেরে। পুলিশ জানায়, আত্মীয়দের সে বলে, বাবা কোথায়, তা তার জানা নেই। পিয়ালি দাবি করে, সে অসুস্থ হয়ে বেলেঘাটা আইডি-তে ছিল।

এর পরেই থানায় নিয়ে আসা হয় দু’জনকে। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, বাবা ও মেয়ের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। ২০১৪ সালে পিয়ালির মা মারা যান। ২০১৮ সালে তার বিয়ে হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই বাবার কাছে ফিরে আসে সে।

পুলিশ জেনেছে, আমহার্স্ট স্ট্রিটে বিশ্বনাথ যেখানে কাজ করতেন, অসুস্থতার কারণে গত কয়েক মাসে সেখানে নিয়মিত যেতে পারেননি। কিন্তু মালিক বেতন দিতেন তাঁকে। গত শুক্রবারও পিয়ালি মালিকের থেকে টাকা নিয়ে আসে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, পিয়ালি প্রথমে কেরোসিন ছিটিয়ে দেয় বিশ্বনাথের শরীরে। তার পরে নিজের ওড়নায় আগুন লাগিয়ে তা ছুড়ে দিয়ে পালায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement