শুয়ে-বসে: ঘরে বসে বসেই মেদ বাড়ছে পোষ্যদের। ফলে বাড়ছে রোগের আশঙ্কাও। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ মাসে হঠাৎই অত্যধিক ওজন বেড়ে গিয়েছিল পিকলুর। নড়াচড়া করতে রীতিমতো সমস্যা হচ্ছিল তার। রক্তপরীক্ষায় থাইরয়েডের সমস্যাও ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, এমন ভাবে ওজন বাড়তে থাকলে হৃদ্রোগ পর্যন্ত হতে পারে। তাঁরা নিদানও দিয়েছিলেন, বাইরে নিয়মিত হাঁটাচলা করাতে হবে। কিন্তু এত দিনের অনভ্যাসে প্রথম প্রথম বাইরে হাঁটাচলায় তীব্র আপত্তি ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছরের ল্যাব্রাডর পিকলুর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাকে বাড়ির বাইরে বার করা গিয়েছিল বলে বিপদ এড়ানো যায়।
তবে পিকলু একা নয়। তার মতো বহু পোষ্যের জীবনে অতিরিক্ত ওজন একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পশু চিকিৎসকদের একাংশ। কারণ, তাদের জীবনযাত্রার বদল! পশু চিকিৎসকেরা বলছেন, আজকের ব্যস্ত জীবনে যেমন কিশোর-কিশোরীরা বাইরে খেলতে ভুলে গিয়েছে, একই ভাবে পোষ্যদের জীবনেও বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। যার প্রভাব পড়ছে তাদের শরীরে। এর মধ্যে প্রধান ও বড় পরিবর্তন হল যে, ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোনোর অভ্যাস চলে গিয়েছে পিকলুর মতো পোষ্যদেরও।
পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শহরে পোষ্যদের মাত্র ১৫-২০ শতাংশ নিয়মিত রাস্তায় বার হয়। বাকিদের দিনের পর দিন রয়ে যেতে হয় ফ্ল্যাট বা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে। বাড়ির সদস্যেরা প্রায় সকলেই চাকরিজীবী হওয়ায় পোষ্যদের নিয়ে বাইরে যাওয়ার কেউ থাকেন না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়িতেই শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেয় পোষ্যেরা। খেলাধূলার অভাবে পোষ্যদের শরীরও ক্রমশ স্থূল হয়ে যায়। গত বুধবার ছিল ‘পেট ওবেসিটি অ্যাওয়ারনেস ডে’। সেই প্রেক্ষিতেই পোষ্যদের স্থূলতার বিষয়টি আলাদা মাত্রা পাচ্ছে।
পশু-চিকিৎসক কৃশানু ঘোষ জানাচ্ছেন, আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত বাড়ির বাইরে বেরোত পোষ্যরা। মাঠে দৌড় থেকে খেলাধূলা বা রাস্তায় হাঁটা— করত তারা সবই। কিন্তু ফ্ল্যাট-সংস্কৃতি শুধু যে মানব জীবনে পরিবর্তন এনেছে তা-ই নয়, গুরুত্বপূর্ণ বদল এনেছে পোষ্যদের জীবনযাত্রাতেও। কৃশানুবাবুর কথায়, ‘‘ওদের বাইরে বার করবে কে? সেটা একটা সমস্যা। অনেক পরিবার তবু হ্যান্ডলার রেখে পোষ্যদের বার করেন। কিন্তু অধিকাংশ পোষ্যই বাইরে যেতে পারে না।’’
তবে পোষ্যদের স্থূলতার কারণ শুধু চার দেওয়ালে আটকে থাকাই নয়। এর সঙ্গে রয়েছে বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাবার দেওয়ার প্রবণতা। ফলে যে পরিমাণ ক্যালরি পোষ্যদের শরীরে ঢুকছে, শারীরিক কসরত না থাকায় তা ঠিকমতো খরচ হতে পারছে না। ফলে ওজন বাড়ছে পোষ্যের। আর এক পশু-চিকিৎসক সুভাষ সরকার বলছেন, ‘‘খাবারে নিয়ন্ত্রণ দরকার। পোষ্যদের জন্য নির্দিষ্ট খাবার না খেলে কিন্তু ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কারণ, ওদের শরীর আর মানুষের শরীরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পোষ্যদের জন্য নির্দিষ্ট খাবারে সব কিছু ঠিক পরিমাণে থাকে। সেটা না খাওয়ালেই
ওজন বাড়বে।’’
এই ওজনবৃদ্ধি পোষ্যদের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক? কৃশানুবাবুর কথায়, ‘‘ওজন বাড়লে পোষ্যদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি থাকে। এ ছাড়া থাইরয়েড, আর্থারাইটিস, গাঁটে ব্যথা-সহ সব রোগই হতে পারে ওদের।’’