Durgapuja 2022

শ্রীভূমির পুজোর ঠেলায় ফের কি স্তব্ধ হবে ভিআইপি রোড

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ভোগান্তির প্রতি বছরের এই চিত্র যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে ভিআইপি রোড এবং তার সঙ্গে সংযোগকারী লেক টাউন, বাঙুরের একাধিক রাস্তায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৫
Share:

গত বছর শ্রীভূমির পুজোমণ্ডপ ও লেজ়ার শো ঘিরে সেখানকার ভিড় সামলাতে ঘাম ছুটেছিল পুলিশের। ফাইল ছবি

রাস্তায় বাস-অটোর মতো গণপরিবহণের দেখা নেই। সার্ভিস রোড বন্ধ। মূল রাস্তায় প্রায় এগোচ্ছে না যানবাহন। পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা উপচে পড়ছে গাড়িতে। বাস-অটো না পেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে গিয়ে নাস্তানাবুদ মানুষজন। আরও অভিযোগ, কোথাও বড় কোনও অঘটন ঘটলে অ্যাম্বুল্যান্স বা দমকল কোন পথে পৌঁছবে, সেই জায়গাটুকুও কার্যত থাকে না।

Advertisement

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ভোগান্তির প্রতি বছরের এই চিত্র যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে ভিআইপি রোড এবং তার সঙ্গে সংযোগকারী লেক টাউন, বাঙুরের একাধিক রাস্তায়। আবারও আসছে পুজো। এ বারেও উৎসবের রাতে ভিআইপি রোডে গণপরিবহণ না পেয়ে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে।

শারদোৎসবের রাতে ভিআইপি রোডে মানুষের নাকাল হওয়ার পিছনে প্রতি বার অভিযোগের আঙুল ওঠে শ্রীভূমির পুজোর দিকে। সঙ্গে যুক্ত হয় দমদম পার্ক এলাকার একাধিক পুজোও। দু’জায়গা থেকেই কাতারে কাতারে দর্শনার্থী জড়ো হন ভিআইপি রোডে। গত বছর সপ্তমী ও অষ্টমীতে সন্ধ্যার পরে ভিড়ের চাপে এই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করতে হয়েছিল পুলিশকে। ভিআইপি রোড দিয়ে যাতায়াতকারী অটোচালকদের দাবি, এ বারও সন্ধ্যার পরে কেষ্টপুর ছাড়িয়ে অটো চলতে দেওয়া হবে না বলে ইতিমধ্যেই তাঁদের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ৪৪ নম্বর রুটের বাসও কমিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে খবর।

Advertisement

দর্শনার্থীদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পার্কিংয়ের জায়গা ভর্তি থাকে। ফলে আশঙ্কা, এ বারও শ্রীভূমি ও দমদম পার্কের পুজো দেখতে এসে তাঁদের দীর্ঘ পথ হাঁটতে হতে পারে। পাশাপাশি লেক টাউন, বাঙুর, কেষ্টপুর, বাগুইআটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, নিজস্ব গাড়ি না থাকলে তাঁরা কী ভাবে যাতায়াত করবেন?

বিধাননগর কমিশনারেটের অবশ্য দাবি, গত বছরও ব্যস্ত সময়ে কেষ্টপুর পর্যন্তই অটো চলতে দেওয়া হয়েছিল। কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে কলকাতায় তো অটো চলতেই দেওয়া হয় না। তা-ও এখানকার অটোচালকদের বলা হয়েছে, তাঁরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলকাতার দিকে যেতে পারবেন। তবে ব্যস্ত সময়ে যেতে দেওয়া হবে না।’’

গত বছর শ্রীভূমির পুজোমণ্ডপ ও লেজ়ার শো ঘিরে সেখানকার ভিড় সামলাতে ঘাম ছুটেছিল পুলিশের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, অষ্টমীর রাতে নবান্নের নির্দেশে শ্রীভূমিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর পৃষ্ঠপোষকতার শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের এ বার ৫০ বছর। ফলে এ বারও সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে পুলিশের একাংশ। সে কারণেই ভিআইপি রোডে যাত্রী ওঠানামার কারণে ট্র্যাফিকের গতি শ্লথ হওয়া এড়াতে, অটো ও বাসের উপরে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

উল্টোডাঙা-বাগুইআটি রুটের অটোচালকেরা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী থেকে ৫ অক্টোবর দশমী পর্যন্ত সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কেষ্টপুরের মধ্যে অটো চলাচল সীমাবদ্ধ থাকবে। সোমনাথ দত্ত নামে এক অটোচালক বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে, কোনও চালক যদি অটো নিয়ে পরিবারের সঙ্গেও ভিআইপি রোড ধরে ঠাকুর দেখতে যান, সেই অটোও বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’ আর এক চালকের কথায়, ‘‘পুলিশ বলে দিয়েছে, এ বার শ্রীভূমির পুজোর ৫০ বছর। সন্ধ্যার পরে কেষ্টপুর পর্যন্ত আমাদের গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে। কিন্তু ওই সময়টাই আমাদের বেশি রোজগারের সময়। কয়েকটি পুজোর কারণে রোজগারে কোপ পড়তে চলেছে।’’

অন্য দিকে, পুলিশের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন ভিআইপি রোডের উপরে একমাত্র বাসস্ট্যান্ড ৪৪ রুটের বাসমালিকেরা। তাঁরা জানান, গত বছর শ্রীভূমির পুজোর ভিড়ের কারণে সপ্তমী ও অষ্টমীতে সন্ধ্যার পরে ভিআইপি রোডে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ওই দু’দিন ৪৪ নম্বর-সহ কোনও বাস চলতে পারেনি। সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বাসমালিক বলেন, ‘‘৭০টি বাস রয়েছে এই স্ট্যান্ডে। বাস না চললে কিংবা সংখ্যা কমিয়ে দিলে মালিকদের যেমন ক্ষতি, তেমনই বহু মানুষের হাঁটা ছাড়া গতি নেই। আমরা পুলিশের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement