ফাইল চিত্র।
তবে কি বাম পুর বোর্ডের আমলের জন্ম শংসাপত্রের (বার্থ সার্টিফিকেট) ফাইল ফের প্রকাশ্যে আসতে চলেছে? ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কলকাতার তদানীন্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি যেন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। আর তাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে।
ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিকাশবাবুর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘আপনার আমলে বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার সেই ফাইলটা বার করব? কাদের জন্মের শংসাপত্র দিয়েছিলেন? আদৌ কি তারা শংসাপত্র পাওয়ার যোগ্য ছিল? দেখবেন ফাইলটা? না কি আমি দেখব?’’ এর পরেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
জন্মের শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে বাম বোর্ডে কেলেঙ্কারি হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি ঠিক কী ছিল?
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৫-২০১০ পর্যন্ত পুর বোর্ডে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। মেয়র ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সেই সময়ে আদালতের নির্দেশে শহরের ২২ হাজার পথশিশুকে বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। এর পরে পুর বোর্ড থেকে বামফ্রন্ট বিদায় নিলে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১২ সাল নাগাদ তদন্তে দেখা যায়, বাম আমলে যে ২২ হাজার বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশেরই রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই! তৎকালীন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দিয়ে কমিটি গঠন করে এই কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করান। প্রাথমিক ভাবে তদন্তে উঠে আসে, রেজিস্ট্রেশন নম্বরহীন ওই সার্টিফিকেটগুলি দেওয়ার পদ্ধতিটাই ছিল বেআইনি।
এর পরে তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতা হাই কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে ১১টি শুনানিও হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সাল নাগাদ ওই তদন্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি এক আইএএস অফিসারকে তলব করার পরেই রহস্যজনক ভাবে তদন্তে দাঁড়ি টেনে দেন মেয়র শোভন।
এ দিকে, আট বছর আগে ধামাচাপা পড়া বার্থ সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুনে খুশি কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। শুক্রবার প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘সেই সময়ে আমিই পুরসভার মাসিক অধিবেশনে লাগাতার আন্দোলন করে বাম আমলের ওই কেলেঙ্কারির বিষয়টি নজরে এনেছিলাম। আমার চাপেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়েতদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করান তদানীন্তন মেয়র শোভন। কিন্তু কয়েক বছরতদন্ত চলতে না চলতেই তা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ বিষয়টি ফের প্রকাশ্যে আনার জন্য। তদন্ত পুনরায় শুরু হলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসবেই।’’
পুরনো সেই প্রসঙ্গ তুলে কলকাতার বর্তমান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলছেন, ‘‘বাম আমলে ২২ হাজার পথশিশুকে বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার পুরো পদ্ধতিটাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। যার জন্য আমরা সেই সময়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছিলাম।’’ তদন্ত মাঝপথে কেন বন্ধ হয়ে গেল? এ বিষয়ে অতীন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তৎকালীন মেয়র, অধুনা আইনজীবী-সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেন, ‘‘এর উত্তর আগেই দিয়েছি। আসলে তৃণমূল আতঙ্কে ভুগছে। তাই উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছে।’’