মনমোহন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী— দেশের অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রায় সমস্ত শীর্ষ পদেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনমোহন সিংহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশের পাশাপাশি, তাঁর অবদানের কথাও উল্লেখ করলেন এই সব পদে কাজ করা অর্থনীতিবিদেরা।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং ডি সুব্বারাওয়ের সঙ্গে মনমোহন সরকারের অর্থ মন্ত্রকের দ্বিমত একাধিক বার প্রকাশ্যে চলে আসে। শুক্রবার রাজন বলেন, ‘‘বড় অর্থনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি, ভারতের অগ্রগতি কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে তাঁর (মনমোহন সিংহ) দূরদৃষ্টি ছিল। এর কতটা রাজনৈতিক ভাবে রূপায়ণযোগ্য, সে সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা ছিল তাঁর।’’ আর সুব্বারাওয়ের কথায়, ‘‘তিনি ছিলেন খুব ভাল শ্রোতা। বেশি কথা বলতেন না। তবে যখন বলতেন, শুধু সার কথাই বলতেন।’’ শীর্ষ ব্যাঙ্কের আর এক প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেলের মতে, ‘‘এখনকার সরকার যে বিকশিত ভারত গঠনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা আসলে গত ৩০ বছরের আর্থিক কর্মকাণ্ডের সুফলের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ শীর্ষ ব্যাঙ্কের এখনকার গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র মনমোহনের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন।
মনমোহন জমানাতেই ২০০৯-১২ সালে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ছিলেন কৌশিক বসু। কাজ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে। তাঁর মতে, সারা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মনমোহনকে মনে রাখা হবে। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘আমেরিকা এবং ইউরোপের কর্পোরেট নেতৃত্ব, বিজ্ঞান, গবেষণা এবং নীতি নির্ধারণে ভারতীয় মেধার যে প্রাচুর্য দেখা যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ ’৯০-এর দশকের আর্থিক পালাবদল।’’ এ দিন আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপীনাথ এক্স-এ লেখেন, ‘‘মনমোহন সিংহের ১৯৯১ সালের বাজেট ভারতীয় অর্থনীতিকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছিল। কোটি কোটি মানুষের আর্থিক সম্ভাবনার উন্নতি ঘটিয়েছিল। তাঁর সুদূরপ্রসারী সংস্কার উদ্বুদ্ধ করেছিল আমার মতো বহু তরুণ অর্থনীতিবিদকে।’’
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাকেশ মোহন মনে করিয়ে দেন, মনমোহন তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এসেছেন প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণে। মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া, শঙ্কর আচার্য, অরবিন্দ ভিরমানি এবং তিনি নিজে এর উদাহরণ।