তখনও কার্নিশে সুজিত (বাঁ দিকে), ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
মল্লিকবাজারের বেসরকারি হাসপাতালের আটতলার কার্নিশ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালেই এক চিকিৎসাধীন সুজিত অধিকারীর। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তিনি কার্নিশে বসেছিলেন। হাজির ছিল পুলিশ, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দল-সহ হাসপাতাল কর্মী ও হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। এতটা সময় ধরে তাঁকে ভুলিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে। তাতেও কর্ণপাত করেননি সুজিত। অতঃপর, কার্নিশ থেকে পড়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই হাসপাতালেরই আইটিইউ-তে ভর্তি। শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বেনিয়াপুকুর থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছে সুজিতের পরিবার। সেই অভিযোগে মৃতের পরিবারের প্রশ্ন, যে রোগীর সুস্থ হয়ে শনিবারই বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, তাঁর কী করে এমন হল? শনিবারই সন্ধ্যায় ওই বেসরকারি হাসপাতালে এসে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ময়নাতদন্তের জন্য সুজিতের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে। যদিও এই ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে।
শনিবার ঘটনার পর মৃতের পিসি প্রশ্ন তুলেছিলেন, সুজিত যত ক্ষণ ওই কার্নিশে বসেছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে কি নীচে জাল পাতা যেত না? এই প্রসঙ্গে উদ্ধারকারী দলের বক্তব্য, সুজিত এমন জায়গায় বসেছিলেন, ওই জায়গার নীচে জাল পাতা সম্ভব নয়। কারণ অপরিসর জায়গায় জাল লাগানোর পর্যাপ্ত স্থানের অভাব।
প্রশ্ন উঠছে, এইচডিইউয়ের বিছানা থেকে রোগী বেরিয়ে কার্নিশে গেলেন কী করে?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নার্স দেখেন সুজিত জানলা খুলে জোর করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নার্স দৌড়ে গিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। রোগীর জামা ধরেও ফেলে ছিলেন তিনি। কিন্তু রোগী ঘুরে গিয়ে নার্সকে কামড়ানোর চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সুজিত সম্ভবত ‘বেড কি’ (যে লম্বা লোহার দণ্ডের সাহায্যে হাসপাতালের বেডের উচ্চতা বাড়ানো-কমানো হয়) ব্যবহার করে জানালার ল্যাচের স্ক্রু কেটে ফেলেছিলেন। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, এক জন রোগী ‘বেড কি’ দিয়ে জানালা খুলে ফেললেন, অথচ কেউ টের পেলেন না! তা নিশ্চয়ই কয়েক মুহূর্তের কাজ নয়, তা হলে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি জানালার স্ক্রু কাটলেন, কিন্তু সবই হল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখের আড়ালে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সুজিত যত ক্ষণ কার্নিশে বসেছিলেন, কেন উপর থেকে ঝুলে বা অন্য দিক থেকে উদ্ধারকারী দল নেমে তাঁকে ধরতে পারল না?
এ ক্ষেত্রে উদ্ধারকারী দলের দাবি, সুজিত নিজেই কার্নিশের ধারে চলে গিয়েছিলেন। কেউ তাঁকে উদ্ধার করুক, তা তিনি চাইছিলেন না। সে ক্ষেত্রে উদ্ধারকারী দলকে সুজিতের কাছাকাছি পৌঁছতে গেলে লুকিয়ে যেতে হত। কিন্তু সুজিত, কার্নিশের এমন একটি কোণে বসেছিলেন, যেখান থেকে দু’দিকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ফলে উদ্ধারকারী দলের গা ঢাকা দিয়ে তাঁকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা ছিল না।
প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কিন্তু তবু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কোনও রোগী বিপজ্জনক ভাবে কার্নিশের ধারে চলে গেলে, তাঁকে ফেরানোর জন্য সেই রোগীর মতির উপরই নির্ভর করে বসে থাকা ছাড়া কি সত্যিই আর কোনও উপায় নেই?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।