প্রতীকী ছবি। ছবি— পিটিআই।
দক্ষিণদাঁড়ি লেকটাউন এলাকায় লোহা-লক্কড়ের দোকান চালান বছর তেত্রিশের সুজিত অধিকারী। শনিবার মল্লিকবাজারের বেসরকারি হাসপাতালের আটতলার কার্নিশ থেকে তাঁকেই ছিটকে পড়ে যেতে দেখে শিউরে উঠেছে বাংলা। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেন এ ভাবে চলে যেতে হল সুজিতকে? অথচ সুস্থ হতেই ওই হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি!
সুজিতের পরিবার সূত্রে খবর, বছর তেত্রিশের সুজিত আগে লরি চালাতেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি লোহা-লক্কড়ের দোকান খোলেন। ভালই চলছিল নিজের ব্যবসা। সুজিতের পিসি দাবি করেছেন, ভাইপো খানিক পানাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ছেলেবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছেন। বাড়িতে অভিভাবক বলতে এক পিসি। দিন পঁচিশ আগে সুজিতের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। দুই সন্তানকে নিয়ে কী ভাবে চলবেন, তা নিয়ে চিন্তাও ছিল সুজিতের। জানা গিয়েছে, সুজিতের একটি ছেলের বয়স বছর দুয়েক। বড় ছেলের বয়স ৯ বছর।
দৈনন্দিন জীবনে স্ত্রী বিয়োগের ছাপ পড়তে দেননি সুজিত। ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করেছিলেন। খুলেছিলেন দোকানও। কিন্তু সম্প্রতি বাড়িতে মাথা ঘুরে পড়ে যান সুজিত। মুখের একটি অংশে আঘাত লাগে। সে যাত্রায় চোখে, মুখে জল দিয়ে সম্বিত ফিরলেও বাড়ির লোকেরা ঠিক করেছিলেন, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। সেই মতো, তাঁর পিসি মল্লিকবাজারের বেসরকারি হাসপাতালটিতে আনেন সুজিতকে। হাসপাতালের লিফটেই আরও এক বার অজ্ঞান হয়ে যান সুজিত। চিকিৎসকরা বলেন, তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রয়োজন। তখন থেকেই ওই হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগেই ভর্তি ছিলেন সুজিত।
ঘটনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, সম্ভবত, ‘বেড কি’ (যে চাবি ঘুরিয়ে হাসপাতালের বিছানার উচ্চতা বাড়ানো-কমানো হয়।) ব্যবহার করে জানালার ল্যাচের স্ক্রু কেটে তিনি জানালা দিয়ে কার্নিশে আসার পথ তৈরি করেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এক জন রোগী যত দক্ষই হোন না কেন, জানালার ল্যাচের স্ক্রু কাটলেন, অথচ তা ঘূণাক্ষরেও টের পেলেন না কেউ!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।