স্মরণ: স্কুলের সামনে মৌনী মিছিলে অভিভাবকেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, স্কুল পরিচালন সমিতির মধ্যে কোথাও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যার ফলে বারবার জিডি বিড়লা স্কুলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এমনই অভিযোগ অভিভাবকদের সংগঠন ‘জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর। সংগঠনের আরও অভিযোগ, সমন্বয়ের অভাবের কারণেই স্কুলের অনেক তথ্য তাঁরা জানতে পারেন না। তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা কর্তৃপক্ষকে সব সময় বলতেও পারেন না।
রবিবার সকাল এগারোটা নাগাদ অভিভাবকেরা কৃত্তিকার স্মরণে জিডি বিড়লা স্কুল থেকে রানিকুঠি মোড় পর্যন্ত মৌনী মিছিল করেন। সেখান থেকে স্কুলে ফিরে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা। স্কুলের তরফে আজ, সোমবার কৃত্তিকার স্মরণে প্রার্থনার আয়োজন করা হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওর ক্লাসের সহপাঠীদের মানসিক চাপ কাটাতে শীঘ্রই কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মতে, আগেই এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে হয়তো এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত। তাঁদের বক্তব্য, এক জন পড়ুয়ার মানসিক অবস্থা বোঝার দায়িত্ব অভিভাবকের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও। কারণ পড়ুয়ারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কৃত্তিকা তিন মাস ঘুমোতে পারেনি। তার চোখ-মুখে সেই ক্লান্তির ছাপ পড়ার কথা। প্রতিদিন তার সঙ্গে কথা বলেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুঝতে পারলেন না কৃত্তিকা কতটা মানসিক চাপে ছিল!’’ অভিভাবকদের মতে, স্কুলে কোনও ছাত্রী যদি এমন মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যায় তা হলে তার কাউন্সেলিং করা দরকার। মানসিক চাপে থাকা পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাদের উপরে বিশেষ নজর রাখা উচিত স্কুল কর্তৃপক্ষের।
সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘স্কুলের এক পড়ুয়ার যৌন নিগ্রহের ঘটনায় আগেই একটি ফোরাম তৈরি হয়েছিল। তার পরে আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে স্কুলের নানা বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কোনও লাভ হয়নি। ফলে স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে আমাদের মতামত সে ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিতে পারতাম না।’’ অভিভাবকদের সংগঠনের অনেকেই মনে করেন, শুধু পড়ুয়া নয়, প্রয়োজনে তাঁদেরও কাউন্সেলিং করা দরকার। এ দিন সঞ্জয়বাবু জানান, বিভিন্ন কারণে চাপে থাকেন অভিভাবকেরাও। কেউ যদি জানান তিনি মানসিক চাপে আছেন, সে ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তাঁরও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
কৃত্তিকার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার। শনি ও রবিবার স্কুল ছুটি ছিল। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, স্কুল বন্ধ থাকায় তারা কৃত্তিকার বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। সোমবার এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান সদস্যেরা। অভিভাবকদের দাবি, কৃত্তিকার ঘটনায় কিছু প্রশ্নের উত্তর তাঁদের ভাবাচ্ছে। সেগুলি হল, স্কুলে সিসি ক্যামেরা আছে ঠিকই কিন্তু শৌচালয়ের সামনে এক জন মহিলা সহায়িকা থাকার কথা। তিনি কি সে দিন ছিলেন না? যদি না থাকেন, তাহলে কেন? আর যদি থেকেও থাকেন তবে একটি মেয়ে শৌচালয়ে ঢুকে ঘণ্টাখানেক পরেও বেরোল না, সেটা তাঁর নজর এড়াল কী করে?