যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য তোলপাড়। পুলিশের পাশাপাশি পদক্ষেপ করছে জাতীয় ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের আতশকাচের তলায়। র্যাগিংয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দল পাঠাচ্ছে ইউজিসিও। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কর্তৃপক্ষের তরফে এর দায় কে নেবেন? সেই প্রশ্নের ভিত্তিতেই কার্যত বেআব্রু হয়ে গিয়েছে যাদবপুরের মতো দেশের সেরা তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নড়বড়ে অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষকদের একাংশও।
যাদবপুরে বর্তমানে উপাচার্য নেই। দু’জন সহ-উপাচার্যের মধ্যে এক জন আছেন। ঘটনার পর থেকে তিন দিন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর দেখা মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিল, অসুস্থতার জন্য ছুটিতে আছেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী অবশ্য সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে, রেজিস্ট্রার বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এ দিন অবশ্য স্নেহমঞ্জু ক্যাম্পাসে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘‘আমি অসুস্থ বলে আমায় প্রথমে কিছু জানানো হয়নি। পরে অন্যরা বলেছিলেন বিষয়গুলি সামলে নেবেন।’’ রবিবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিয়েবাড়ি গিয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিক!’’
ইউজিসির বিধি মেনে নিয়োগ না হওয়ায় যাদবপুর স্থায়ী উপাচার্য হারিয়েছিল। পূর্ববর্তী স্থায়ী উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে প্রথমে তিন মাসের জন্য অস্থায়ী হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছিল রাজভবন। পরবর্তী কালে রাজ্যপাল যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্তকে অস্থায়ী হিসাবে দায়িত্ব দিলেও তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে সহ-উপাচার্য পদে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। জুলাইয়ের শেষে মেয়াদ ফুরিয়েছে সহ-উপাচার্য পদে থাকা চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের। সেই পদ এখনও পূরণ হয়নি। তাই আপাতত স্থায়ী পদে আছেন বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সুবিনয় চক্রবর্তী। ঘটনার রাতে অমিতাভ কলকাতার বাইরে থাকায় তিনি উপাচার্যের ভার সামলাচ্ছিলেন। ঘটনার পরের দিনই ফিরে আসেন।
এই নড়বড়ে প্রশাসন নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পরিস্থিতি শোচনীয়। উপাচার্য-সহ একাধিক পদ ফাঁকা। কর্মসমিতিতেও বছরের পর বছর ধরে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বারবার আটকে যেতে হয়।’’ রেজিস্ট্রারও এ দিন বলেন, ‘‘উপাচার্য থাকলে এবং এগ্জ়িকিউটিভ কমিটির বৈঠক নিয়মিত করতে পারলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হত। উপাচার্য না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক অনুমোদন পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে।’’
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘‘ইউজিসিকে স্বাগত কিন্তু রাজ্যপাল যে ভাবে উচ্চশিক্ষা দফতরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, তাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ার দিকে যাবে।’’ ইতিপূর্বে ব্রাত্য এ-ও জানিয়েছিলেন যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণে। ফলে এই ঘটনার দায় তাঁর (রাজ্যপাল) এবং তাঁর রাজনৈতিক প্রভুদের। এ দিকে, শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে সিপিএমের ছাত্র-সংগঠন এসএফআই। তাদের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করুন।’’ শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এর পাল্টা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।